• রাতের শিফ্‌টে মহিলা কর্মীদের সুরক্ষায় খসড়া প্রস্তাব তৈরি রাজ্যের, দফতরভিত্তিক মতামত চাইলেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা
    আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • গত বছর ৮ অগস্ট গভীর রাতে আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। তখন কর্মক্ষেত্রে রাতের শিফ্‌টে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাতের শিফ্‌টে সরকারি অফিসে মহিলাদের কাজ করা নিয়ে স্পষ্ট নীতি তৈরি করার। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার এক বছরের মাথায় ওই বিষয়ে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে নবান্ন। এই খসড়া রাজ্য সরকারের সব দফতরে পাঠানো হয়েছে।

    খসড়া প্রস্তাবটি পাঠিয়ে দফতরভিত্তিক মতামত জানতে চেয়েছেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা। দফতরভিত্তিক মতামত পৌঁছোলেই তা চূড়ান্ত করে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলেই ওই খসড়াটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে কার্যকর করা হবে। নবান্ন সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। নবান্নের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, রাতের শিফ্‌টে কর্মরত মহিলাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। ওই বিষয়ে যৌথ ভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে রাজ্যের শ্রম দফতর এবং স্বরাষ্ট্র দফতর। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপর ক্রমবর্ধমান অপরাধের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েই ওই পদক্ষেপ। মোট ২২টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই খসড়া প্রস্তাবে। ওই খসড়া অনুযায়ী, রাতে কোনও সরকারি অফিসে মহিলাকর্মীরা কর্তব্যরত থাকলে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপত্তারক্ষী রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়। পাশাপাশি, কর্মস্থলে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি নজরদারি, জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহণের সুবিধা রাখার কথাও বলা হয়েছে।

    খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মহিলাদের অভিযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ করার মতো পরিকাঠামো তৈরি রাখতে হবে। সরকারি দফতরে কর্মরত পুরুষ সহকর্মীরা মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা অশালীন আচরণ করলে আইনগত ভাবে কী শাস্তি হতে পারে, সে বিষয়ে সকল কর্মীকে সজাগ করতে হবে। মহিলাদের উপর অত্যাচারের ক্ষেত্রে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিতে হবে বলেও ওই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, দফতরগুলিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে যে, কোনও মহিলাকে জোর করে রাতের শিফ্‌টে কাজ করানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট মহিলাকর্মীর লিখিত সম্মতি পেলে তবেই তাঁকে ওই শিফ্‌টে রাখা যাবে। স্বনির্ভর মহিলাকর্মীদের স্বার্থে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাতের শিফ্‌টে কাজ করলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

    নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং শ্রমসচিব ওই খসড়া প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। রাজ্যের ওই পদক্ষেপ কঠোর ভাবে বাস্তবায়িত হলে তা কর্মক্ষেত্রে মহিলাকর্মীদের নিরাপত্তা ও কর্ম-অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।

    সম্প্রতি এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বৈঠক করেছেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বেসরকারি বাস সংগঠনগুলিকেও। সেখানে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, নারীসুরক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতায় রাজি বেসরকারি বাসমালিকেরা। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে রেণু প্রধান নামে এক মহিলা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার ভিত্তিতেই কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, মহিলা ও রূপান্তরকামীদের সুরক্ষার জন্য গণপরিবহন পরিষেবায় একটি ‘হেল্পলাইন নম্বর’ চালু করা হোক, যেখানে সহজেই তাঁরা নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। সে বিষয়ে রাজ্য সরকার যথাসময়ে পদক্ষেপ করতে না পারায় আদালতের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, নারীসুরক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া-সহ হাই কোর্টের নির্দেশ কী ভাবে দ্রুত কার্যকর করা যায় সেই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বিষয়টি নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকদের শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)