‘বাংলাদেশি ভাষা’! জাতীয় সঙ্গীতের ভাষাকে অপমান করেছে দিল্লি পুলিশ: মমতার পাশে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী
আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
‘বাংলাদেশি ভাষা’ বিতর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। সোমবার তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে-র প্রধান সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশকে আক্রমণ করেন স্ট্যালিন। বলেন, “অহিন্দি ভাষার উপর আক্রমণের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন সম্মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি।” ভাষার উপর এই আক্রমণের উপযুক্ত জবাব মমতা দেবেন বলেও জানিয়েছেন করুণানিধির পুত্র।
সম্প্রতি নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ অধিকারিক অমিত দত্ত একটি চিঠি পাঠান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে। অভিযোগ, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করেছে দিল্লি পুলিশ। এমন চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে তৃণমূল শিবির। তবে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি পাল্টা জবাবে জানায়, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যায় না। তাই অভিযোগ করার আগে বিষয়টি যাচাই করে দেখার দাবি তুলেছে পদ্মশিবির।
দিল্লি পুলিশের এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরেই সমাজমাধ্যমে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে রবিবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাষায় গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, বাংলা ভাষাতেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছিল। সোমবার মমতার সুরেই স্ট্যালিন লেখেন, “এটা এমন একটি ভাষার উপর সরাসরি আক্রমণ, যে ভাষায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছিল।” অমিত শাহের মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশকে নিশানা করে স্ট্যালিনের সংযোজন, “এই ধরনের বিবৃতি প্রকাশ অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়, এই ঘটনা আসলে একটি জমানার অন্ধকারাচ্ছন্ন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যারা ধারাবাহিক ভাবে দেশের বৈচিত্রকে খাটো করার চেষ্টা করছে।” নিজের পোস্টে মমতার রবিবারের বক্তব্য এবং দিল্লি পুলিশের ওই চিঠির ছবিও দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী।
দ্রাবিড় অস্মিতাকে হাতিয়ার করা ডিএমকে দীর্ঘ দিন ধরেই দেশে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়ে এসেছে। সম্প্রতি দেশের নয়া শিক্ষানীতিতে কেন্দ্র ঘুরপথে অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা করছে বলে সরব হয়েছেন স্ট্যালিন। এই আবহে বাংলার ‘ভাষা আন্দোলনে’ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে এই রাজ্যের শাসকদল। সে ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে দেশে নতুন অক্ষ তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
তৃণমূল শিবির অবশ্য দিল্লি পুলিশের ওই চিঠিকে সামনে রেখে বিজেপিকে আক্রমণ শানানো অব্যাহত রেখেছে। যে আধিকারিক ওই চিঠি প্রকাশ করেছিলেন, তাঁকে সাসপেন্ড করার দাবির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও সুর চড়িয়েছে তারা। সোমবার এই প্রসঙ্গে দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “ওই চিঠি বাংলার প্রতি বিজেপির বৈষম্যমূলক আচরণকে বেআব্রু করে দিয়েছে। ওই পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করার দাবি তুলছি আমরা। আমাদের দাবি, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে অমিত শাহকে।” রবিবারই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে দিল্লি পুলিশকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবিও তোলেন তিনি।
বিজেপি অবশ্য সোমবারও নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। বাংলা এবং বাংলাদেশি ভাষা আলাদা, ফের এমনটা দাবি করে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তাঁর দাবি, বাংলা শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। এই শব্দ কোনও ভাষাগত পরিচয় বহন করে না বলে দাবি তাঁর। তিনি লিখেছেন, “অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে ভাষাটিকে বাংলাদেশি বলে অভিহিত করে একদম ঠিক কাজ করেছে দিল্লি পুলিশ। নির্দিষ্ট কিছু উপভাষা, ভাষার টান, যা ভারতে ব্যবহৃত বাংলার চেয়ে আলাদা, সেগুলিকে বোঝাতে ওই লব্জটি ব্যবহার করেছে দিল্লি পুলিশ।” মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাঙালিদের সরব হওয়ার ডাক দিয়ে দেশে ভাষাগত দ্বন্দ্বে প্ররোচনা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পদ্মশিবিরের।