সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আবার সেই অর্ধ সত্য বলে ভাইরাল ভিডিও। মালতী মুর্মু-র পর এবার পদ্মশ্রী দুখু মাঝি। ইউটিউবারদের একাংশের হাত ধরে একেবারে সঠিক কথা না বলে এবার সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হলেন ‘গাছদাদু’। ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি দুখু মাঝি পদ্মশ্রী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রায় সর্বত্র তিনি একই কথা বলে এসেছেন, প্রশাসন তথা রাজ্য সরকার তাঁকে বাড়ি দেয়নি। তাঁর ভাঙা বাড়ি। কিন্তু বাঘমুণ্ডি ব্লক প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, পদ্মশ্রী পাওয়ার আগেই সরকারি প্রকল্পে তিনি বাড়ি পান। কিন্তু তিনি যেখানে বসবাস করেন অর্থাৎ তাঁর বাস্তুভিটের এক অংশ সত্যি ভাঙা।
চলতি বর্ষায় ওই ঘরের এমনই দশা বাকি অংশও যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই গ্রামের মানুষের সাহায্য নিয়ে সেই কাঁচাবাড়িকে বাঁচাতে এক চিলতে ঘরের ডানদিকে বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। একইভাবে ঘরের ভেতরেও বহুদিন আগে থেকেই বড় খুঁটি দিয়ে ওই কাঁচাবাড়িকে যেন ভেঙে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর ওই কুঁড়েঘরের মাথার উপরে টালি-খাপরা একেবারে ভেঙে যাওয়ায় ত্রিপল দিয়ে বৃষ্টির জল আটকাচ্ছেন। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি হলে সেই ত্রিপল চুঁইয়ে জল পড়ছে ঘরেই। বৃষ্টির জলে মেঝেতে পরে যাতে কাদা না হয়ে যায় তাই একটি পাত্রে জল জমছে। ছোট্ট কাঁচাবাড়ির দুটি ঘরে সূর্যের আলো পর্যন্ত আসে না। তাই বাল্ব জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন নথিপত্র সামনে এনে জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) প্রকল্পে তাঁর বাড়ির কাজ বাঘমুণ্ডি ব্লক প্রশাসনের তরফে সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়। এই বিষয়টি সামনে আসতেই দুখু মাঝি সরকারের দেওয়া সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেন, তিনি বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু সেই বাড়িতে থাকে তার বড় ছেলে।
ওই ছেলের অনেক বড় পরিবার তাই তিনি ও তার স্ত্রী কিছুটা দূরে ভিটে বাড়িতেই থাকেন। সেই ভাঙা বাড়ি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ এই পদ্মশ্রী তাঁর বাড়ি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেন। এদিকে ওই পদ্মশ্রী জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই বার্ধক্যভাতার সহায়তা পান। বিশেষভাবে সক্ষম তার ছোট ছেলেও সরকারি ভাতা পান। একদিকে পাকাবাড়ি সেই সঙ্গে ভাতার সরকারি সহায়তা- দুখুর এই বয়ানও ভাইরাল হয়। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো পরিষ্কার জানান, ‘‘পদ্মশ্রী দুখু মাঝি আজও যেভাবে বৃক্ষরোপণের কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু তিনি সরকারের বাড়ি পাননি এই কথাটা ঠিক নয়। ওই ‘গাছদাদু’ পদ্মশ্রী পাওয়ার আগেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পান।’’ এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শনিবার তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়ে ‘গাছদাদু’-র সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। কথোপকথনই তিনি জানান, পাকা বাড়ি তৈরির জন্য তিনি প্রথম ধাপে ২ লক্ষ টাকা এবং আগামী দিনে ওই বাড়ি সম্পূর্ণ করতে সমস্ত রকম সহায়তা করবেন।
কিন্তু প্রশ্ন তাহলে কি আবেগ দিয়ে রাজনীতির মঞ্চ তৈরি হচ্ছে? সমাজ মাধ্যমের ভাইরাল কন্টেন্ট কি সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়? অর্ধসত্য? পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির জিলিংসেরেঙের মালতী মুর্মু ও ‘গাছদাদু’ দুখু মাঝির এমন ভাইরালের পর এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। এই ঘটনা যেন আবার প্রমাণ করছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখা যায়, তার পিছনে সম্পূর্ণ সত্য সবসময় থাকে না। আবেগপ্রবণ করে তোলা ভিডিও আর বাস্তবের ছবি এক নয়। তবে পদ্মশ্রী দুখুর এখন একটাই দাবি, মাথার উপর যেন একটা শক্ত ছাদ থাকে। যে ছাদের তলায় এই ৮০ বছর বয়সে স্বস্তিতে কাটাতে পারেন তিনি।