ঠিকাদারদের বিল ছাড়ার আগে সব নথি যাচাই করতে চায় পুরসভা
আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
এ বার থেকে শুধুমাত্র বিল জমা দিলেই হবে না। কলকাতা পুরসভার কাজের টাকা পেতে হলে জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট একটি ফর্ম, যেখানে উল্লেখ করতে হবে কাজ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য। পুরসভার তরফে এমনই নির্দেশ জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যে কোনও প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল মঞ্জুর করার আগে নির্দিষ্ট ‘চেকলিস্ট ফর্ম’ পূরণ করে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
পুরসভা সূত্রের খবর, এই ফর্ম চালুর উদ্দেশ্য বিল মঞ্জুরের আগে প্রকল্প সংক্রান্ত সব নথি এক জায়গায় রাখা, যাতে কাজের হিসাব, মান ও অগ্রগতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। অতীতে বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কাজ পুরো শেষ না-হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত বিল মঞ্জুর হয়েছে, অথবা খরচ বেড়েছে, কিন্তু তার কারণ স্পষ্ট নয়। কোথাও রাস্তা খুঁড়ে কাজ হলেও পরে তা ঠিক ভাবে সংস্কার করা হয়নি। এমন ধরনের গাফিলতি ঠেকাতেই এ বার থেকে প্রতিটি বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে এই চেকলিস্ট।
এই ফর্মে কাজের নাম, অবস্থান, ওয়ার্ড নম্বর, বরো, আনুমানিক খরচ, অতিরিক্ত খরচ, খরচের উৎস (যেমন কলকাতা পুরসভার রাজস্ব তহবিল, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প, বিধায়ক বা সাংসদ তহবিল), কোন বিভাগ বা ইঞ্জিনিয়ার প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন, টেন্ডারের দর, বিলের অঙ্ক, প্রকল্প কবে শুরু এবং শেষ হয়েছে— যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরে কাজ শেষ হয়, সেই দেরির জন্য জরিমানা ধার্য হয়েছে কিনা এবং তা আদায় হয়েছে কিনা— সেই তথ্যও থাকতে হবে। কোনও প্রকল্পে খরচ বাড়লে তার কারণ জানাতে হবে।
এর পাশাপাশি আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক নজরে রাখতে বলা হয়েছে। যেমন, ম্যানহোল বা নর্দমার মুখে ইট, বালির বস্তা বা অন্য কিছু ফেলে জলের গতি আটকানো হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। ম্যানহোলের ঢাকনা ঠিকঠাক আছে কিনা, তার মাপ এবং ভিতরে ধাপে ওঠানামার ব্যবস্থা আছে কিনা, কোথাও কাঠ বা লোহা কিংবা নির্মাণ সামগ্রী, মাটি বা আবর্জনা পড়ে আছে কিনা, দিতে হবে সে সবের পরিদর্শন-রিপোর্ট।
যদি রাস্তা খুঁড়ে কাজ হয়ে থাকে, তবে সেই রাস্তা পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে কিনা, না ফিরলে কোন দফতর রাস্তা পুনর্গঠন করবে, সেই তথ্যও জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট ফর্মে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল কোন বিভাগ দিয়েছে, তার পরিমাণ কত, কোনও খরচ যুক্ত ছিল কিনা, তা-ও উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। নির্মাণের পরে কংক্রিট বা পাইপের টেস্ট রিপোর্ট, মেটিরিয়াল অ্যাপ্রুভাল সার্টিফিকেট এবং নকশা জমা দিতে হবে, যেখানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা-সহ সমস্ত বিবরণ থাকবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, অতীতে একাধিক প্রকল্পে দেখা গিয়েছে, বিল অনুমোদিত হলেও কাজের মান খারাপ, গাফিলতি রয়েছে কাজে। অথচ, বিল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কাগজপত্র ছাড়াই। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরো ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণে আনতে এই নির্দিষ্ট তথ্যপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘এর ফলে আর্থিক স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনই কাজের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন থাকবে না। বিল পাওয়ার আগে এখন থেকে সবাইকে নিয়ম মেনে সব তথ্য জমা দিতে হবে।’’