বাংলা-বিদ্বেষ, বাঙালি হেনস্থা এবং বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে এ বার পাল্টা কৌশলের পথে হাঁটছে বিজেপি। এক দিকে নিচু তলায় দলীয় সংগঠনকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনে সহায়তা শিবির করে মানুষের কাছে ইতিবাচক প্রচার করার জন্য। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এই বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে।
রাজ্য বিজেপির বিধাননগর কার্যালয়ে তিন দিনের টানা সাংগঠনিক বৈঠকে নিচু তলার সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গেই জেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিভাগ ধরে ধরে জেলা সভাপতিদের ডেকে কথা বলেছেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা বাংলা-বাঙালি বিরোধিতার প্রচার মোকাবিলার কৌশল নেওয়ার কথা বৈঠকে উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গেই এসেছে এসআইআর। ইতিমধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক জায়গায় শিবির করছে বিজেপি। দলের তরফে দাবি, সেই শিবিরে ভাল সাড়া মিলছে। বহু মানুষ নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করছেন। ঠিক সেই ভাবেই শিবির করে মানুষকে এসআইআর-এর সুফল বোঝানোর চেষ্টা করবে বিজেপি। সেই সঙ্গে যাতে প্রয়োজনীয় নথি পেতে ভোটারের কোনও অসুবিধা না হয়, সেই দিকটিও দেখা হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এসআইআর শুরু হলে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে কমিশনকে সহযোগিতা করব। সেই সঙ্গে সময় এলে দেখতে পাবেন, আমরা সাংগঠনিক শক্তি নিয়েও মাঠে নামব। এসআইআর যাতে ঠিক ভাবে হয়, সেই জন্য যা করা প্রয়োজন, সবটাই করব।’’
তবে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের ভাষ্য থেকে বিজেপি যে সরতে চাইছে না, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে শমীকের বক্তব্যে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা তৃণমূলের এই ভ্রান্ত প্রচারের পাল্টা কোনও প্রচার ভাষ্য তৈরি করব না।’’ বরং, হিন্দুত্বের ভাষ্যে অনড় থেকেই শমীকের দাবি, ‘‘যাঁরা ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তাঁরা সকলে শরণার্থী। তাঁদের এবং ভারতীয় মুসলমানদের মাথার একটা চুল স্পর্শ করার ক্ষমতা কোনও কমিশনের নেই, এটা বিজেপির গ্যারান্টি!’’ তবে প্রকাশ্যে বিজেপি নেতারা যা-ই বলুন, বিষয়টি নিয়ে যে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের, এ কথা তাঁরাও ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নিচ্ছেন। পাল্টা কৌশল তৈরি করতে বঙ্গের বিজেপি সাংসদেরা শাহের শরণাপন্ন হতে চলেছেন। সূত্রের খবর, দিল্লিতে আজ, সোমবার তাঁদের সঙ্গে শাহের বৈঠকের সম্ভবনা রয়েছে। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি এবং এসআইআর-এর বিষয়টি উঠতে পারে। সেই সঙ্গে আর জি করের নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবার যে ভাবে সিবিআই তদন্ত নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন, সেই বিষয়টিও উঠে আসতে পারে বলে একটি সূত্রের দাবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ অবৈধ কয়লা-বালি খাদান ও দুর্নীতি নিয়ে ইডি তদন্তের দাবি করে কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনিমন্ত্রী জি কিসান রেড্ডিকে চিঠি দিয়েও প্রত্যাহার করে নেন বলে দাবি করেছে বিজেপি। দলীয় সাংসদদের প্রতিনিধিদল আজ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি করবে বলে জানিয়েছেন শমীক।