• ‘বাংলাদেশি নই বলার পরেও মার থামছিল না’
    আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • কয়েক ঘণ্টা আগে গ্রামে ফিরেছেন। চোখে-মুখে স্বস্তি। তবে আতঙ্ক যেন পুরো কাটছে না জাহাঙ্গির আলম, ওয়াসিকুল শেখদের। চেনা জায়গা এমন ‘অচেনা’ হয়ে উঠবে, ওঁরা ভাবতেও পারেননি। সাত-আট বছর ধরে প্রতি বছরই তাঁরা বিহারের গয়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যান। কিন্তু এ বারের মতো অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। এ দেশের বৈধ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশি সন্দেহে গয়ার কিছু যুবক তাঁদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের।

    মাস কয়েক আগে গয়ার চুনোতি থানা এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গিরেরা। জাহাঙ্গির বলেন, “গত মঙ্গলবার রাতে আমাদের এক সঙ্গীকে ঘরের সামনে চার-পাঁচ জন যুবক ঘিরে ধরে। মারধর, গালিগালাজ শুরু হয়। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখিয়ে বলার চেষ্টা করি, আমরা বাংলাদেশি নই। কিন্তু ওরা কোনও কথাই শুনছিল না। মারধর চলে বেশ কিছু ক্ষণ।” তাঁরা জানান, খানিক পরে স্থানীয় থানার পুলিশ আসে। ওয়াসিকুলের দাবি, তাঁদের ন’জনকে বার করে দিয়ে আধ ঘণ্টা ধরে পুলিশ ঘরে তল্লাশি চালায়। নানা পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও, কোনও কথা শুনতে চায়নি পুলিশ। তাঁদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এর পরে পুলিশ তাঁদের ঘর থেকে বেরোতে বারণ করে চলে যায়।

    জঙ্গিপুরের জালিবাগানের বাসিন্দা ওই যুবকেরা তিন দিন ঘর থেকে বেরোননি বলে জানান। এর মধ্যে, এক পড়শির মোবাইল থেকে তাঁরা ফোন করেন গ্রামে। এক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জঙ্গিপুরের পুলিশ সেখানকার থানায় শ্রমিকদের পরিচয়ের নথিপত্র পাঠায়। জাহাঙ্গির বলেন, “প্রতি রাতে পুলিশ ও স্থানীয় যুবকেরা এসে শাসিয়ে যেত। বার বার চাপ দিত, যেন নিজেদের বাংলাদেশি বলে মেনে নিই।” শেষে, শনিবার দুপুরে তাঁরা লুকিয়ে গয়া স্টেশনে পৌঁছে ফরাক্কার ট্রেন ধরেন।

    ওড়িশার ঝাসুপুরাতেও হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ জঙ্গিপুরের ১১ জন শ্রমিকের। নজরুল শেখ নামে এক জনের কথায়, “দিন কয়েক আগে গভীর রাতে আমাদের থাকার জায়গায় চড়াও হয় পুলিশ। তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি কলেজে। সেখানে আরও প্রায় ১৭০ জন বাংলাভাষীর সঙ্গে আটকে রাখা হয়।” তিনি জানান, চার দিন পরে সেখান থেকে ছাড়া পান তাঁরা।

    শনিবার মুম্বই পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে হরিহরপাড়ার তিন যুবককে ‘আটক’ করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করে কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান দাবি করেছেন যে, “গত এক মাসে ভিন্‌ রাজ্যে হেনস্থার শিকার হওয়া ১৪৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।” পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের রাজ্য সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “ভিন্‌ রাজ্যে হেনস্থার শিকার এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক এখনও পর্যন্ত ফিরে এসেছেন। বেসরকারি ভাবে সংখ্যাটা কয়েক হাজার।” জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিতকুমার সাউ বলেছেন, “ভিন্‌ রাজ্যে কোনও শ্রমিক সমস্যায় পড়লে, তাঁদের সব রকম ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)