• ডিএমদের নবান্নে ডেকে বার্তা, তৎপর কমিশনও
    আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • ভোটের কাজ নাকি সরকারেরকাজ— কোনটা অগ্রাধিকার পাবে? আধিকারিকেরা কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন? এ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং নবান্নের টানাপড়েনের আবহে জেলাশাসকদের নবান্নে ডেকে বার্তা দিল রাজ্য। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে ডেকে জেলাশাসকদের বোঝানো হয়, ভোটের সময়ে কমিশনের কাজ করতে হলেও প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারেরই অধীনস্থ তাঁরা।

    অন্য দিকে, ১৯৫০ সালের ‘রিপ্রেজ়েন্টেশন অব পিপলস’ (আরপি) আইনের ধারা উল্লেখ করে কমিশন-কর্তাদের দাবি, ভোট সংক্রান্ত যে কোনও কাজে আধিকারিকেরা তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। রাজ্যে শুরু হতে চলা ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার আগে এ নিয়ে প্রশাসনিক উত্তাপ বৃদ্ধির আভাস মিলছে।

    এসআইআর-এর প্রস্তুতি ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দিল্লির নির্বাচন সদন এবং তার অধীনে এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর। বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নিয়োগের পাশাপাশি তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গোটা কাজে যুক্ত করা হচ্ছে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক, নির্বাচনী কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক, এসডিও এবং বিডিও-দের। এ বার রাজনৈতিক দলগুলির তরফে বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তারা চাইছে, গোটা প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান আধিকারিকেরা।

    গত বৃহস্পতিবার আচমকাই নবান্নে ডেকে জেলাশাসকদের বোঝানো হয়, এখনও ভোট আসেনি। ফলে এখন তাঁদের মনোযোগ রাজ্যের কাজের প্রতিই থাকার কথা। ফলে শনিবার থেকে শুরু হওয়া পাড়া এবং দুয়ারে সরকার কর্মসূচির সফল রূপায়নে তাঁরা দায়বদ্ধ। নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচির পরে পরিষেবা প্রদান চলবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। আবার এ রাজ্যে এসআইআর শুরু হওয়ার কথা অগস্ট-সেপ্টেম্বরেই। এই অবস্থায় কমিশন জানাচ্ছে, আরপি আইনের (১৩সিসি) ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, শুধু নির্বাচন পরিচালনার সময়েই নয়, বরং ভোটার তালিকার প্রস্তুতি, সংশোধন, যাচাই প্রক্রিয়াতেও সিইও, জেলাশাসক-সহ বাকি সব আধিকারিক-কর্মী কমিশনের ‘ডেপুটেশনে’ চলে আসেন। ওই পর্বে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান, শৃঙ্খলা—সবই কমিশনের দ্বারা বিবেচিত হয়। কমিশন কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, ওই আইনেরই ৩১ এবং ৩২ ধারা অনুযায়ী, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনও কাজে গাফিলতি হলে সংশ্লিষ্ট যে কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে কমিশন বা সিইও দফতর। তেমন হলে জেল-জরিমানাও হতে পারে। তাতে কেন্দ্র বা রাজ্যের থেকে কমিশনকে অনুমতি নিতেও হবে না। একই সঙ্গে, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনও কাজে গরমিল ধরা পড়লে অভিযুক্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ করতে পারে কমিশন। তাতে জেল, জরিমানা বা দু’টিই হতে পারে।

    প্রসঙ্গত, বীরভূমের সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বিএলও-দের কাছে ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম যেন বাদ না যায় তা দেখার অনুরোধ থাকবে।” বিএলও-রা রাজ‍্য সরকারের চাকরি করেন মনে করিয়ে ভোট ঘোষণার আগে বা পরে রাজ‍্য সরকারই সব বলে বার্তা দেন মমতা। তিনি আরও বলেন, “কোনও সিদ্ধান্ত এলে আমাকে বা মুখ্যসচিবকে জানাবেন। আমাদের না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। তার মানে পা এক দিকে মাথা এক দিকে? ভয় দেখালেই ভয় দেখতে হবে? তা হলে ভয়ে ঘরে বসে থাকুন।”

    অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সিইও দফতরকে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে স্বতন্ত্র দফতর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বার্তা রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ইতিমধ্যেই দিয়েছে কমিশন। তাদের ঠিকানা বদল চেয়ে একাধিক বার নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছে সিইও দফতরও। রাজ্য দ্রুত পদক্ষেপ না করলে কমিশনে নালিশ করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, এই অবস্থায় ভোটের কাজে আধিকারিকদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করতে আইনের প্রয়োগ করতেইপারে কমিশন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)