বাজেয়াপ্ত হওয়া লরির ক্ষতি, পাঁচ পুলিসকর্মীর বেতন থেকে মালিককে ২৮ লক্ষ মেটাতে নির্দেশ
বর্তমান | ০৪ আগস্ট ২০২৫
সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: বাজেয়াপ্ত করা লরির একাধিক দামি যন্ত্রাংশ খোয়া যাওয়া ও লরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মোটা অঙ্কের ‘জরিমানা’র মুখে পড়লেন পাঁচ অফিসার। জরিমানা বাবদ বেতন থেকে ২৮ লক্ষ টাকা মেটাতে হবে জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার তৎকালীন আইসি, তদন্তকারী অফিসার (আইও) এবং মালখানা ইনচার্জকে! সম্প্রতি এনডিপিএস কোর্ট এক নির্দেশে জেলার পুলিস সুপার খণ্ডবহলে উমেশ গণপতকে এই নির্দেশ দিয়েছে। যদিও হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ এই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
এনডিপিএস কোর্ট বলেছিল, ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা লরির মালিক রাজেন্দ্রকুমার যাদবকে মিটিয়ে দিতে হবে। জলপাইগুড়ির এসপি খণ্ডবহলে উমেশ গণপত জানিয়েছেন, ‘রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পুলিস হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল। ৩ জুলাই বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ প্রথমে স্থগিতাদেশ দেন। ৩১ জুলাই পরবর্তী শুনানিতে বিচারপতি উদয় কুমার ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।’
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে কোতোয়ালি থানা মাদক পাচারের অভিযোগে ১৪ চাকার লরি সহ জীতেন্দ্রকুমার, মনোজকুমার নিশাদ এবং নিখিলেশ কুমার নিশাদকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষে লরির মালিক রাজেন্দ্রকুমার যাদবকে ‘পলাতক প্রধান ষড়যন্ত্রী’ হিসেবে চার্জশিট দেয় কোতোয়ালি থানার তদন্তকারী অফিসার এসআই ধনঞ্জয় মজুমদার। এরপর হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে আগাম জামিনের আবেদন করেন লরির মালিক। জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে কোতোয়ালি থানা থেকে লরি ফেরত নিতে গিয়ে চক্ষু চরকগাছ রাজেন্দ্রর। কারণ, পুলিস হেফাজতে থানার মধ্যে থেকে লরির ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ উধাও! লরিটি কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে ২২ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে লরিটি কিনেছিলেন রাজেন্দ্রকুমার। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে তিনি ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত চলতি বছরের মে মাসে তদন্তকারী অফিসার এসআই ধনঞ্জয় মজুমদারের কাছে রিপোর্ট তলব করে। কিন্তু সেই রিপোর্টে অসন্তুষ্ট আদালত জালপাইগুড়ি বারের সিনিয়র সদস্য কুম্তল সরকারকে স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করেন। যার রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত সম্প্রতি লরির মালিককে এই ২৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।রায়ে বলা হয়েছে, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় কর্মরত সব আইসি, মালখানা ইনচার্জ এবং তদন্তকারী অফিসারকে তাঁদের বেতন থেকে লরির দাম বাবদ এই ২৮ লক্ষ টাকা ১৫ দিনের মধ্যে লরির মালিককে মেটাতে হবে।’ এই রায়ে বিপাকে পড়েছেন কোতোয়ালি থানায় কর্মরত আইসি বিপুল সিনহা, বিশ্বরায় সরকার, অর্ঘ সরকার, তদন্তকারী অফিসার ধনঞ্জয় মজুমদার, মালখানা ইনচার্জ প্রাণেশ রায় বসুনিয়া।