বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়া, মারধর করা তো ছিলই। এবার বাংলা ভাষাকে সরাসরি বাংলাদেশি ভাষা বলে সম্বোধন করে বিতর্কে জড়ালেন দিল্লি পুলিশ। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গভবনে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানেই বাংলা ভাষাকে দিল্লির পুলিশ আধিকারিক বাংলাদেশি ভাষা বলে উল্লেখ করেছেন। এবার দিল্লি পুলিশের এহেন কাজ নিয়ে সরব হল তৃণমূল।
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডেল থেকে দিল্লি পুলিশের বিতর্কিত চিঠিটি পোস্ট করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশি সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে বাংলায় লেখা বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এইসব নথির তথ্য যাচাই করার জন্য একজন অনুবাদকের প্রয়োজন লিখে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু চিঠিতে বাংলা ভাষার বদলে বাংলাদেশি ভাষা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।
সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলের হ্যান্ডল থেকে চিঠিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘বিজেপি বাংলা বিদ্বেষের সকল সীমা পার করে ফেলছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে একের পর এক বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের পর এবার অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ সব সীমা অতিক্রম করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি ভাষা বলে দাগিয়ে দিল।’
রাজ্যের শাসকদলের দাবি, ‘কোনো ভুল নয় — এটি একটি ইচ্ছাকৃত অপমান, পরিকল্পিত চক্রান্ত, যেখানে সংবিধানে স্বীকৃত এবং ধ্রুপদী ভাষার মধ্যে অন্যতম একটি ভাষাকে পরিচয়হীন করে দেওয়া হচ্ছে এবং কোটি কোটি বাংলা ভাষাভাষী ভারতবাসীকে নিজেদের দেশেই বহিরাগত হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা চলছে।’
বাঙালিদের পরিচয় নিয়ে সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। সোশাল মিডিয়ায় পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বাংলা ভাষায় সারা বিশ্বে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ কথা বলেন। এটি ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার মধ্যে একটি। সেই ভাষাকে বাংলাদেশি বলা কেবলই একটি ঘৃণ্য অপমান নয় — তা হল ভাষাটিকে ভারতীয় পরিচয় থেকে মুছে দেওয়ার, তার বৈধতা খারিজ করার, এবং বাংলাভাষী মানুষদের বহিরাগত প্রমাণ করার নির্লজ্জ চেষ্টা।’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার জন্য পুলিশকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে অবিলম্বে ভুল সংশোধন করার দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি এই দিন এই চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন।
তিনি মনে করিয়ে দেন বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি মনিষীদের কথা। পোস্টের ক্যাপশনে মমতা লেখেন, ‘দেখুন, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ কীভাবে বাংলা ভাষাকে "বাংলাদেশি" ভাষা হিসেবে বর্ণনা করছে! বাংলা, আমাদের মাতৃভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায যে ভাষায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় সঙ্গীত রচিত, যে ভাষায় কোটি কোটি ভারতীয় কথা বলেন এবং লেখেন, যে ভাষা ভারতের সংবিধান দ্বারা পবিত্র এবং স্বীকৃত, তাকে এখন বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে!! কলঙ্কজনক, অপমানজনক, জাতীয়তাবিরোধী, অসাংবিধানিক!! এটি ভারতের সকল বাংলাভাষী মানুষের অপমান। ভারতের বাঙালি-বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তীব্রতম প্রতিবাদের আহ্বান জানাই।’
এই প্রসঙ্গে অবশ্য বঙ্গ বিজেপির মত আলাদা। অমিত শাহের মন্ত্রকের অধীনস্থ পুলিশের লেখা চিঠিতে কার্যত কোনও ভুল দেখছে না রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। রাজ্য সভাপতির শমীক ভট্টাচার্যর কথায় যেমন, ‘একদম ঠিক ভাষাই ব্যবহার করা হয়েছে। আপনি বাংলাদেশের একটা বই এনে পড়ুন। আর পশ্চিমবঙ্গের একটা বই এনে পড়ুন। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোনটা সুবোধ সরকার লিখেছেন, আর কোনটা বাংলাদেশের সফিকুল ইসলাম লিখেছেন। ওই ভাষাটা পড়লেই বোঝা যায়। সুতরাং বাংলা ভাষায় কথা বললেই সে ভারতবাসী হয়ে যাবে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই তার নামটা ভোটার লিস্টে রেখে দিতে হবে, এটা হতে পারে না। পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন জায়গায় নকল আধার কার্ড নিয়ে এখন ওরা বঙ্গভবনের মধ্যেও ঢুকে পড়ছে।’