কোন্নগরে তৃণমূল নেতা হত্যায় গ্রেপ্তার গ্যাংস্টার ‘বাঘা’
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ আগস্ট ২০২৫
কোন্নগরের কানাইপুরে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পিন্টু চক্রবর্তীর নৃশংস খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় তাঁকে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রবিবার বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাম আমলে কুখ্যাত গ্যাংস্টার হিসেবে পরিচিত ‘বাঘা’কে। এই ঘটনায় এই নিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাঘাকে। বাম আমলের ‘ত্রাস’ বাঘার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে তৃণমূল নেতা খুন হন বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সংস্থার জমি বিক্রিকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েতে মতবিরোধ তৈরি হয়। অধিকাংশ সদস্য জমি বিক্রির পক্ষে থাকলেও এর বিরোধিতা করেন পিন্টু চক্রবর্তী। শুধু তাই নয়, ডানকুনির একটি জমি নিয়েও তাঁর সঙ্গে বাকি অংশীদারদের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধই শেষ পর্যন্ত প্রাণনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে – বিশ্বনাথ দাস ওরফে ‘বিশা’, বিশ্বজিৎ প্রামাণিক ও দীপক মণ্ডল।
বিশা ছিলেন পিন্টুর ব্যবসায়িক পার্টনার। তিনিই তিন লক্ষ টাকা সুপারি দিয়ে বিশ্বজিৎ ও দীপককে ভাড়াটে খুনি হিসেবে নিয়োগ করেন। ঘটনার দু’দিন আগে খুনিরা বিশার বাড়িতে এসে অবস্থান নেয় ও এলাকায় রেকি করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ পিন্টু চক্রবর্তী নিজের গ্যাস গোডাউনের উল্টো দিকে দাঁড় করানো বাইকে ওঠার সময় আচমকা দুই দুষ্কৃতী পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারে। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও থেমে থাকেনি হামলা। এরপর হেঁটেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে খুনিরা।
তদন্তে উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য – খুনিরা ঘটনার দিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিল। সেই সূত্র ধরে টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে তাদের অবস্থান। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে বারাসত ও শাসন থেকে বিশ্বজিৎ ও দীপককে গ্রেপ্তার করা হয়। জেরায় উঠে আসে সুপারির তথ্য, গ্রেপ্তার হয় বিশা। রবিবার পুলিশ খুনে অন্যতম মূলচক্রী ও কুখ্যাত গ্যাংস্টার বাঘাকেও সোনামুখী থেকে গ্রেপ্তার করে। বাম আমলে পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গে আতঙ্ক ছড়ানো এই দুষ্কৃতী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল। পিন্টু খুনের ষড়যন্ত্রে তার প্রত্যক্ষ যোগ মিলেছে বলেই পুলিশ জানিয়েছে।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলেও তদন্তকারীরা মনে করছেন, ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছে আরও কয়েকজন। তাদের খোঁজে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, এলাকায় ফের বাঘার নাম জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই খুনের পিছনে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থ নয়, রাজনৈতিক রেষারেষিও রয়েছে। পিন্টু চক্রবর্তীর মতো জনপ্রিয় পঞ্চায়েত সদস্যকে প্রকাশ্য রাস্তায় এভাবে খুন করে কার্যত একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ।
পুরো বিষয়টির সঙ্গে কারা কারা যুক্ত, তা জানতে তদন্ত চালাচ্ছে হুগলি জেলা পুলিশ।