‘তুকতাক কোচ’ থেকে সুনীলদের ‘হেডস্যার’, কতটা পথ পেরোলে খালিদ জামিল হওয়া যায়?
আজকাল | ০১ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আইএসএলে জামশেদপুর ও নর্থ ইস্টের কোচ হিসেবে দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আইজলকে আই লিগ জেতান। আবার দুই প্রধানে কোচিং করাতে এসে তিনি ব্যর্থ। অপমানের জ্বালা নিয়েই তিনি কোচিং করিয়েছেন আইএসএলের মঞ্চে। এহেন খালিদ জামিলের হাতেই এবার উঠল জাতীয় দলের রিমোট কন্ট্রোল।
কলকাতায় কোচিং করানোর সময়ে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘তুকতাক কোচ’। একবার এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমের চিত্রসাংবাদিক তাঁর ছবি তুলতে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছিলেন। খালিদ তখন ইস্টবেঙ্গলের কোচ। তিনি সেই চিত্রসাংবাদিককে বলে দেন, ‘তুমি সরে যাও এখান থেকে। নইলে আমি অভিশাপ দেব তোমাকে। সেই অভিশাপ লেগে যাবে তোমার’।
খেলার আগে বা পরে খালিদের সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিশেষ কিছুই বেরতো না। খুব অল্প কথা বলতেন। ফোন করলে অধিকাংশ সময়ে ধরতেন না। ধরলেও সেই দু-একটা কথা। তার মধ্যে বিশেষত্ব কিছু থাকত না। ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকার সময় তাঁর একটা ‘গুমঘর’ ছিল। লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে খালিদের ঘরকে ওই নামেই ডাকা হত। সেখানে পছন্দের ফুটবলারদের ডেকে কথা বলতেন। বাকিদের ডাকতেনই না।
লাল-হলুদের কোচ থাকার সময়ে একবার ডার্বির আগে ও পরে মোহনবাগানের মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে জোর ঝামেলা করেছিলেন। শোনা যায় খালিদ জামিল নাকি তাঁকে ধাক্কা দিয়েছেন। অনেকেই খালিদের মধ্যে ছায়া দেখতে পেতেন সৈয়দ নইমুদ্দিনের। ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকার সময়ে খালিদের সঙ্গে সমস্যা হয়েছিল সুভাষ ভৌমিকের। সুভাষ তখন ছিলেন লাল-হলুদের টিডি। সুপার কাপ চলাকালীন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ। সুভাষ সবার সামনেই বলে ফেলেছিলেন, ‘কী দুর্বিনীত ছেলেরে বাবা!’
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু লাল-হলুদের কোচ থাকার সময়ে খালিদ তাঁদের পাত্তাই দিতেন না। আবার মোহনবাগানের রিমোট কন্ট্রোল হাতে নেওয়ার পর তিনি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন ম্যাচ নিয়ে।
নানা সংস্কার ছিল খালিদের। সেগুলো নিয়ে বহুবার লেখালেখি হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। টিমবাসে আসার কথা থাকলেও কখনও কখনও বাসে দেখা যেত না তাঁকে। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসতেন। একবার ডার্বির আগে মোহনবাগানের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, খালিদ নাকি সবুজ-মেরুনের সাজঘরের দেওয়ালের সামনে আঁকিবুকি কেটে গিয়েছেন।
খেলার সময়ে নিজে দাঁড়িয়ে থাকতেন আর সংস্কার বশত খেলোয়াড়দের তাঁর পিছন দিকে থেকে বা সামনে দিয়ে যেতে বলতেন। তবে খালিদ কিন্তু দল নিয়ে সারাদিন ভাবনাচিন্তা করতেন। ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। মোহনবাগানে কোচিং করানোর সময়ে এক বয়স্ক সবুজ-মেরুন সমর্থক বলেছিলেন, ‘সারাটা দিন দল নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে অমল দত্তকে দেখেছি। খালিদও কোনও অংশে কম নয়’।
খালিদ সাংবাদিক বৈঠক করতে যেতেন পছন্দের ফুটবলারকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর সম্পর্কে অনেকে বলতেন, সংস্কার সবারই থাকে। তবে ফুটবলের চেয়ে যদি সংস্কার বেশি হয়ে যায়, তাহলেই সর্বনাশ। খুব খারাপ দিনেও কখনও ফুটবলারদের নিন্দা করেননি খালিদ। একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। মোহনবাগানের কোচ থাকার সময়ে মিশরীয় ফুটবলার ওমর এল হুসেইনির সঙ্গে তাঁর ভাষাতেই কথা বলতেন খালিদ।
এহেন খালিদের হাত ধরেই আই লিগে বিপ্লব ঘটিয়েছিল আইজল এফসি। লেস্টার সিটির সঙ্গে তুলনা হত আইজলের। একমাত্র ভারতীয় কোচ হিসেবে আইএসএলের দুনিয়াতেও খালিদ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। এবার তিনি জাতীয় দলের হেড কোচ।
তাঁর সংস্কারের জন্য বারবার উড়ে এসেছে টিপ্পনি। ব্যর্থতা, অসম্মান মাথায় নিয়ে খালিদ সরে গিয়েছিলেন কলকাতা থেকে। সেই বিতর্কিত খালিদ জামিলই এবার জাতীয় দলের কোচ হয়ে প্রমাণ করে দিলেন, খালিদ জামিল হওয়া সহজ নয়।