• দেশে আইন থাকতেও কেন 'অপরাজিতা বিল' প্রয়োজন? রাজভবনে ফিরিয়ে প্রশ্ন রাষ্ট্রপতির
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০১ আগস্ট ২০২৫
  • নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের ‘অপরাজিতা বিল ২০২৫’ নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল। রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়া এই বিল সম্প্রতি ফেরত পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। জানা গিয়েছে, বিলের যৌক্তিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সরাসরি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে। আর সেই ব্যাখ্যা চাওয়ার মধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা। রাষ্ট্রপতির এই পদক্ষেপ কি আইনি প্রক্রিয়ার অঙ্গ, না কি নারী সুরক্ষা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজনৈতিক মতভেদ?


    রাজভবন সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ‘নির্ভয়া আইন’-এ ধর্ষণ ও নারীর উপর নৃশংস অত্যাচারের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে। সেখানে আবার নতুন করে কেন প্রয়োজন হল রাজ্য আইনের? সেই কারণেই ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় রাজ্যপালের কাছে। উল্লেখ্য, রাজ্যপাল বিলটি অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন।

    ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে এক তরুণ চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ‘রাত দখল’ কর্মসূচি থেকে চিকিৎসক সমাজের সক্রিয়তা, সব মিলিয়ে রাজ্য সরকার প্রবল চাপের মুখে পড়ে। ঠিক তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ রুখতে আনা হবে একটি নতুন কড়া আইন। সেই ভাবনাতেই সেপ্টেম্বর মাসে বিশেষ অধিবেশন ডেকে পাশ করানো হয় 'অপরাজিতা বিল'।

    অপরাজিতা বিল পাশের সময় বিধানসভায় বিরোধী বিজেপি-সহ সব দল সম্মতি জানালেও পরে কেন্দ্রের আপত্তি এক অন্য প্রশ্ন তুলে দেয়। রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে বলা হয়েছে, নারী সুরক্ষা নিয়ে দেশে আগে থেকেই কার্যকর একটি আইন রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য আইনের প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা ব্যাখ্যা না করলে অনুমোদন সম্ভব নয়। ফলে, বিলটি আবার ফিরে আসে রাজভবনে এবং বর্তমানে তা পৌঁছেছে নবান্নে। আইন দফতরে যাচাইয়ের পর নতুন করে মতপত্র যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে। এমনটাই জানা গিয়েছে প্রশাসনিক মহল থেকে।

    তৃণমূলের অভিযোগ, নারী নিরাপত্তা নিয়ে আন্তরিক নয় কেন্দ্র। দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘নারী নির্যাতন রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর দৃঢ়তা থেকেই এই বিল। এখন কেন্দ্র প্রশ্ন তুলে মূল ভাবনাটাকেই খাটো করছে।’ তাঁর মতে, নারী অধিকার নিয়ে বিজেপি সরকার কেবল বুলি আওড়ায় কিন্তু, বাস্তবে পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ পাল্টা বলেন, রাজ্য সরকার আগে ব্যাখ্যা দিক, কেন এত নারকীয় ঘটনাতেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। শুধুমাত্র বিল পাশ করেই দায়িত্ব শেষ হয় না, প্রয়োগটাই আসল।

    এই মুহূর্তে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনার মূল কেন্দ্রে, রাষ্ট্রপতির প্রশ্ন আদৌ কি নিছক আইনি পদক্ষেপ, না এর নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের বিষয়টি? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যেহেতু নারী সুরক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আগে থেকেই একটি কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রয়েছে, তাই পৃথক রাজ্য আইন কার্যকর করার আগে সাংবিধানিক স্তরে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া যুক্তিসঙ্গত। তবে রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে বিলটি রাজ্য সরকারের আইন দফতরে পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ব্যাখ্যা-সহ নতুন করে মত পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। এরপর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তবেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। এই প্রক্রিয়ায় কতটা সময় লাগবে, বা আদৌ বিলটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)