রাজ্যের তৎপরতায় গুজরাতে রেহাই পেলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা, ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রীকে
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩১ জুলাই ২০২৫
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ও সবং থেকে গুজরাটের সুরাতে কাজে যাওয়া দশ শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করে সুরাত সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। প্রায় ২৪ ঘন্টা থানায় আটকে রাখার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ভয়ে ও আতঙ্কে তিন শ্রমিক পরের দিন সকালেই নিজের রাজ্যে ফেরার জন্য ট্রেনে চেপে বসেছেন।
প্রসঙ্গত, একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। নাগরিক পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কাউকে থানায় আটকে রেখে হেনস্থা, তো কাউকে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দিয়ে সপরিবারে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছেন বাংলার জনদরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রুটি-রুজির আশায় ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়া এইসব পরিযায়ীদের প্রথম থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে গুজরাতে। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার গোবর্ধনপুর এবং কেলিয়াড়া এলাকার ১০জন পরিযায়ী শ্রমিক একটি যন্ত্র তৈরির কারখানায় কাজে গিয়ে বিপদে পড়েন। তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের। অগত্যা মুখ্যমন্ত্রীর টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করতেই রক্ষা। ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানাতেই রেহাই মেলে। খবর পেয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন ওই শ্রমিকদের পরিবারগুলি। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, সুরাতের একটি কারখানায় কনভেয়ার বেল্টের কাজের জন্য পিংলার সাহড়দা থেকে ৮ জন শ্রমিক সুরাতে যান। তাঁদের যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে ওই একই জায়গায় পিংলা ও সবং থেকে আরও ১০ জন শ্রমিক যান। পরে গত ২৭ জুলাই দুপুরে সুরাতে পৌঁছন পিংলার সাহড়দা থেকে যাওয়া আটজনের দলটি।
এই দলের অন্যতম সদস্য অরূপ জানা বলেন, ‘২৭ তারিখ দুপুর বারোটা নাগাদ আমরা সুরাতে পৌঁছই। প্রথমে ঘর ঠিক করি। সন্ধ্যেবেলায় বাজার করে ঘরে ফিরে আসি। রাত আড়াইটে নাগাদ পুলিশ আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। সবাইকে তুলে সাইবার ক্রাইম থানায় নিয়ে আসা হয়। পেটে লাথি ও থাপ্পড় মারা হয়। ওরা বারবার আমাদের বাংলাদেশী বলে সম্বোধন করছিল। আধার কার্ড, পাসপোর্ট সহ নানা পরিচয়পত্র দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। গাড়িতে আমাদের থানায় নিয়ে আসার সময় কোনোভাবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে কিছু তথ্য দিই। তারপর ওরা আমাদের প্রত্যেকের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরের দিন সকাল ১১ টা থেকে আমাদের এক একজন করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। আমরা আমাদের গ্রামের কথা জানাই, ফোন নম্বর দিই। তারপরেও আমাদের আটকে রাখা হয়। রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ আমাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই আমরা প্রত্যেকেই খুব ভয়ে ও আতঙ্কে আছি। আমাদের এখানে কুড়ি পঁচিশ দিনের কাজ ছিল। তিনজন এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে, বুধবার সকালে ওরা ট্রেন ধরে গ্রামে ফেরত গিয়েছে। পেটের তাগিদেই এখানে এসেছিলাম কাজ করে দুটো টাকা হাতে পাবো বলে। জানিনা এখন ফিরে গেলে টাকা পাবো কিনা। আমাদের ঠিকাদার মুম্বইয়ে থাকে। আমরা এখন ভয়ে ভয়েই আছি। দেখা যাক ক’দিন থাকতে পারি!’
এই ঘটনায় পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি গুজরাটে অত্যাচারিত শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওদের মধ্যে তিনজন আহমেদাবাদ-হাওড়া এক্সপ্রেসে ফিরে আসছে। ওদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। ওরা আমাদের পুলিশি অত্যাচারের কিছু ভিডিও পাঠিয়েছে। সেই সব ভিডিও ও ছবি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছি। দরকারে আমরা রাজ্যে ডাল ভাত খেয়ে থাকবো। কিন্তু আমাদের ছেলেদের বিপদের মুখে ঠেলে দেব না।’