মাত্র ১২টি আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্র স্মার্ট ক্লিনিকে রূপান্তরিত জেলায়
বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার শতাধিক আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রকে স্মার্ট ক্লিনিকে রূপান্তরিত করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত নদীয়া জেলায় মাত্র ১২টি আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রকে স্মার্ট ক্লিনিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বাকি আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামোর অভাবে স্মার্ট ক্লিনিকে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু করাই হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে জেলার পঞ্চায়েতগুলিতে আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে স্মার্ট ক্লিনিকে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। প্রথম দিকে যখন শুরু হয়েছিল তখন প্রায় ১৭ হাজার রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। ক্লিনিকগুলিতে কম্পিউটার সহ বিভিন্ন জিনিসের অভাব রয়েছে।
নদীয়া জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জেলার মোট ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২৬টিতে আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে রাজ্য সরকারের অধীনে ৫৭জন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আছেন। আর যৌথভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারে অধীনে রয়েছেন ৫৫জন গ্রামীণ ডাক্তার ও ১৪ জন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার। ২৩টি আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রে বর্তমানে কোনও ডাক্তার নেই। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলির পক্ষ থেকে শীঘ্রই ওই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
মূলত যেসব পঞ্চায়েত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই, সেখানেই এই আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ উদ্যোগেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই পরিষেবা চালু হয়েছে। মূলত হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এই পরিষেবা দিয়ে থাকেন। তবে সমস্যা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক খোলা থাকলেও চিকিৎসকরা নিয়মিত বসেন না। ফলে প্রান্তিক ও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষরা স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন।
অনেক ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা বা পরিষেবা সংক্রান্ত নথিপত্রও রাখা হয় না। এই সমস্যা দূর করতেই গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ‘স্মার্ট ক্লিনিক’ নামক একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসকের নিয়মিত উপস্থিতি ও কাজের হিসাব রাখা হচ্ছে। স্মার্ট ক্লিনিক পোর্টালে চিকিৎসককে প্রতিদিন উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে হয়। একইসঙ্গে, প্রতিদিন কতজন রোগী চিকিৎসা পরিষেবা নিলেন, তাও পোর্টালে আপলোড করতে হয়। প্রতিটি রোগীর প্রেসক্রিপশনও সেখানে সংরক্ষিত থাকে।
একজন প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, এই পোর্টালের মাধ্যমে প্রতিটি রোগী নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের সেই অ্যাকাউন্টে যুক্ত করতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্ট থেকেই সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের চিকিৎসকের সমস্ত তথ্য, পুরোনো প্রেসক্রিপশন ও চিকিৎসার ইতিহাস দেখা যাবে। এর ফলে স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনই চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর রোগীদের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
কিন্তু এই স্মার্ট ক্লিনিক রূপান্তরের কাজ নদীয়া জেলায় বন্ধ হয়ে রয়েছে বিগত কয়েক মাস ধরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুর দিকে কয়েক মাস প্রায় ৫০টি ক্লিনিকে অনলাইন চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েতের কম্পিউটার ব্যবহার করেই ডাক্তাররা এই কাজ করতেন। প্রশাসনের তরফ থেকে ১২টি পঞ্চায়েতের আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রকে স্মার্ট ক্লিনিকে পরিণত করা হয়েছে। ডাক্তারদের জন্য আলাদাভাবে কেবিন তৈরি করা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে। কিন্তু বিগত প্রায় চার মাস ধরে সেই স্মার্ট ক্লিনিক রূপান্তরিত করার কাজও বন্ধ হয়ে রয়েছে।