• অদম্য জেদই পাথেয়, ফুটবল নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে মেয়েদের
    আনন্দবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫
  • পরিকাঠামো নেই, প্রশিক্ষণও তেমন নেই— তবু পায়ে বল নিয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখে সুন্দরবনের মেয়েরা। কাকদ্বীপ মহকুমা জুড়ে ফুটবলে এগোচ্ছে এক নতুন প্রজন্ম। গ্রামের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন মেয়েরাও ফুটবল খেলছে। কোথাও অভিভাবকদের চোখ এড়িয়ে, কোথাও ছেঁড়া বুট পায়ে মাঠে নামছে একঝাঁক প্রত্যয়ী মুখ।

    এই মহকুমায় রয়েছে কাকদ্বীপ স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও সাগরের হরিণবাড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মতো মাঠ, কিন্তু সেগুলিতে মেয়েদের জন্য আলাদা করে অনুশীলনের কোনও সময় বরাদ্দ নেই। সাগরের মহেন্দ্রগঞ্জ ও বামনখালি হাই স্কুলে সপ্তাহে একদিন প্রশিক্ষণ হয় ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট নয়। অল্প কিছু জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকলেও তা সীমিত। আশার কথা, সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মেয়েরা নিজেদের পথ তৈরি করে নিচ্ছে।

    সুন্দরবনের বর্তমান প্রজন্মের কাছে ফুটবলের আদর্শ সাগরের সন্ধ্যা মাইতি। বর্তমানে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মহিলা দলে খেলছেন। তাঁর কথায়, “যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের সহযোগিতা করা উচিত। পরিবেশ না থাকলেও, ইচ্ছে আর জেদ থাকলে সাফল্য আসবেই। কাকদ্বীপ মহকুমায় একটি ভাল কোচিং সেন্টার হলে অনেক মেয়ে উপকৃত হবে।”

    মহকুমার বহু স্কুলছাত্রী ফুটবলে আগ্রহী। বামানগর সুবলা হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পৌলমী মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। স্কুলের মাঠেই অনুশীলন করি। জেলায় অনেক জায়গায় খেলেছি, কিন্তু কখনও ভাল কোচিং পাইনি।” সাগরের বামনখালি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মুসকান খাতুনের কথায়, “ফুটবল খেলতে খুব ভাল লাগে। রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছি। যদি সরকারি বা বেসরকারি ভাবে আমাদের এলাকায় কোচিংয়ের ব্যবস্থা থাকত, তা হলে আরও ভাল হত।”

    তবে এই মেয়েরাই আজ কাকদ্বীপ মহকুমার মুখ উজ্জ্বল করছে। স্কুলস্তরে মেয়েরা যোগ দিচ্ছে ‘সুব্রত কাপ,’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিযোগিতায়। জেলার গেমস কমিটির সদস্য দিলীপকুমার জানা বলেন, “গ্রামের মেয়েদের প্রতিভার অভাব নেই। পরিকল্পনা, কোচিং ও পরিবেশ নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। কোচিং পেলে অনেকে জেলা ও জাতীয় দলে পৌঁছতে পারবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই মহকুমা থেকেই ইতিমধ্যেই পাঁচ-ছ’জন মেয়ে জাতীয় স্তরে খেলেছে ২০১৮ সালে। ভবিষ্যতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। একটু সহযোগিতা পেলেই এই মেয়েরাই হয়ে উঠতে পারে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের গর্ব।’’

    এই প্রসঙ্গে কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “গ্রামের মেয়েরা এসে বলছে, ফুটবল খেলতে চায়— এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! এটা একটা বড় সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। মহকুমা এলাকায় মেয়েদের ফুটবল কোচিংয়ের জন্য সরকারি ভাবে যা যা সাহায্য প্রয়োজন, আমরা তা করব। আবেদন করলে আমরা প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)