• পড়ুয়া-শূন্য জেলা সদরের স্কুল, প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ক্লাসঘরে পরপর সাজিয়ে রাখা বেঞ্চ শূন্য। স্কুল চত্বর জুড়ে নীরবতা। বারান্দার লোহার গ্রিলের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা ক্লাসঘরে বসে কিছু কাগজ দেখছেন এক শিক্ষিকা। গোটা স্কুলে তিনিই একা। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। গত জানুয়ারি মাস থেকে এক জন শিক্ষিকা স্কুলে আসেন, দরজা খোলেন, ক্লাসে বসে থাকেন। ছুটির সময় হলে দরজা বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। ওই শিক্ষিকা বলেন, “এত বড় স্কুলে একা বসে থাকি, মাঝে মাঝে গা ছমছম করে।” জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা পোস্ট অফিস মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে যোগমায়া আর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি দিন এ ভাবেই কাটে।

    জলপাইগুড়ি শহরের অন্য দিকে বামনপাড়া আর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে বড় ক্লাসঘরে বসে তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সেই ক্লাসঘরেই বসে তিন পড়ুয়া। আরও এক জন পড়ুয়া ছিল, সে মঙ্গলবার অনুপস্থিত। অর্থাৎ ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা চার, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তিন। পড়ুয়া কম থাকায় স্কুলের একটি ক্লাস ছাড়া আর কোনও ঘর খোলা হয় না। এ ভাবেই ক্লাস চলছে গত ছয় মাস ধরে।

    মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জলপাইগুড়ি জেলা রাজ্যের সব জেলা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সেই জেলার জেলা সদরের সরকারি একাধিক প্রাথমিক স্কুলের পরিস্থিতি এমনই। জেলা সদরের অন্তত ২০টি সরকারি স্কুলে পড়ুয়া নেই, শিক্ষকেরা আসেন, অপেক্ষা করে ফিরে যান। ব্যবহার না হতে হতে ক্লাসঘরগুলিতে নোনা ধরতে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ি শহরের চারটি স্কুল পড়ুয়া-শূন্য হয়ে পড়েছে।

    শহরের চার নম্বর গুমটির মেহেরুন্নেসা আর আর প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া নেই, শিক্ষকও নেই। এ দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দরজা তালাবন্ধ। বাসিন্দারা দাবি করলেন, কয়েক মাস হল স্কুল খোলে না। বিদ্যানিকেতন এবং ওয়াকারগঞ্জ আর আর স্কুলও পড়ুয়া-শূন্য হয়ে পড়েছে। শহরে এগারোটি স্কুল রয়েছে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা দশেরও কম। অন্যদিকে, শহরেরই কিছু স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। ক্লাসঘরে সবাই ধরে না। ঠাসাঠাসি করে বসতে হয় বেঞ্চে। আবার কিছু স্কুলে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস বন্ধ থাকে।

    শিক্ষক রয়েছে, পরিকাঠামো নষ্ট হচ্ছে অথচ এমন ভাবেই স্কুলের দিন কাটছে কেন?

    প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝাঁ বলেন, “এমন দুরবস্থার কারণ সরকারি নীতি এবং দুর্নীতি। কিছু স্কুলে নিয়ম লঙ্ঘন করে সমানে পড়ুয়া ভর্তি করানো হচ্ছে। কিছু স্কুলে পড়ুয়াই নেই। তার ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।” তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বপন বসাক বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সকলেই ভাবনাচিন্তা করছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদও পদক্ষেপ করছে।”

    জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লৈক্ষ্যমোহন রায় বলেন, “কোন স্কুলে কত পড়ুয়া, শিক্ষক বেশি নাকি পড়ুয়া কম সব রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। তার পরে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ হবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)