ব্যবসায়ীদের বিপুল নকল টাকা দেখিয়ে সাইবার প্রতারণা! সন্দেশখালিতে জাল নোট উদ্ধারে চাঞ্চল্যকর তথ্য
প্রতিদিন | ২৩ জুলাই ২০২৫
অর্ণব আইচ: সন্দেহশখালিতে প্রায় ১০ কোটি টাকার জাল ও আসল নোট উদ্ধারে পুলিশের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই বিপুল জাল নোটের সাহায্যে সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিলেন জালিয়াতরা। সোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হওয়ার ধৃতরা জানায়, তারা বিপুল টাকা ঋণ দিতে পারে। ঘটনায় চক্রের এক মাথা ওই মহিলা তিস্তা সেন-সহ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তদন্ত এগোতেই পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, ওই বিপুল টাকার জাল নোট তৈরির পিছনে রয়েছে সাইবার জালিয়াতির ছক। তবে চক্রের মাথা অভিষেক তিওয়ারির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, সুটকেসে থরে থরে টাকা দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার টোপ দিতেন তিস্তা সেন-সহ কয়েকজন। ভিডিও কলে একসঙ্গে এত টাকা দেখে লোভে পড়তেন বহু ব্যবসায়ী। আর এটাই ফাঁদ অভিষেক তিওয়ারি ও তার বান্ধবী তিস্তা সেনের। শুধু ভিডিও কলে সুটকেসভর্তি টাকা দেখানোর জন্য চক্রটি এই টাকা ছাপায়। নতুন মোডাস অপারেন্ডি বা পদ্ধতিতে ভিডিও কলে জাল নোট দেখিয়ে সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ পাতে এই চক্রটি। এভাবে বার্নপুরের এক প্রোমোটারকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রসেসিং ফি হিসাবে তাঁর কাছ থেকে এক শতাংশেরও কম, ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্তরা।
মঙ্গলবার ভবানী ভবনে সিআইডি কর্তা বিশাল গর্গ জানান, এই চক্রের মূল মাথা অভিষেক তিওয়ারি এখনও পলাতক। যে নোটগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলির মধ্যে ৫২ হাজার টাকা নগদ। ৪০ হাজার টাকার জাল নোট। এ ছাড়াও বাকি প্রায় আট কোটি টাকা খেলনা নোট।” এই খেলনা নোট ছাপানোর অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থেকে দেবত্তোম চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের দাবি ওই ব্যক্তি জানিয়েছে, তিনি মিডলম্যান হিসাবে কাজ করেছেন। শিয়ালদহের একটি ছাপাখানা থেকে নোটগুলি ছাপানো হয়েছে। ছাপাখানার মালিকদের জানানো হয়েছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ওই খেলনা টাকা লাগবে। কিন্তু সেই টাকা অভিষেক তিওয়ারির হাতে তুলে দেওয়ার পর তারা নতুন পদ্ধতিতে জালিয়াতির ছক সাজায়।
উল্লেখ্য, এই অভিষেক তিওয়ারি ও তিস্তা সেন কয়েক মাস আগেও বিপুল টাকা জালিয়াতির অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। জামিন পাওয়ার পর ফের নতুন করে জালিয়াতির ছক কষে ওই যুগল। সোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হওয়ার ব্যক্তিদের জানায়, তারা বিপুল টাকা ঋণ দিতে পারে। বার্ষিক মাত্র চার শতাংশ সুদে ওই টাকা ফেরত দিতে হবে। বিশ্বাসভাজনের জন্য ওই নোটগুলি সুটকেসে পুরে ভিডিও কলে দেখায়। তাতেই বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ফাঁদে পড়েন। যে ব্যবসায়ী যত টাকা চাইতেন, তার মাত্র এক শতাংশ প্রসেসিং ফি হিসাবে চাইত জালিয়াতরা। কয়েকটি বিশেষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠালেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিত তারা। এই ভাবেই চলত প্রতারণা। ঘটনার তদন্তে পুলিশ।