থানায় পুলিশি অত্যাচারে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ, বন্ধ-বিক্ষোভে উত্তাল পুরুলিয়ার আড়শা
প্রতিদিন | ২৩ জুলাই ২০২৫
অমিতলাল সিং দেও, পুরুলিয়া: মোবইল চুরির অপরাধে থানায় অভিযুক্তকে বেধড়ক মারধর! তার জেরে মৃত্যু পুরুলিয়ার আড়শা গ্রামের বিষ্ণু কুমার নামের এক ব্যক্তির! অভিযোগ তুলে সরব পরিবার। উত্তাল পুরুলিয়ার আড়শা গ্রাম। অভিযুক্তদের শাস্তি ও পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবিতে আজ, বুধবার আড়শাজুড়ে ডাকা হয়েছে বন্ধ। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নির্যাতনের কোনও চিহ্ন মিলেনি। রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ, কিডনি ও লিভারের রোগে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে আড়শার বিভিন্ন বাজার, দোকানপাট, যান চলাচল বন্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আড়শা ও সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। বিক্ষোভ মিছিল থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগও উঠেছে। থানার গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখান আড়শা গ্রামের বাসিন্দারা। অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত বুধবার আড়শা থানা এলাকার একটি মদ ভাটিতে মোবাইল হারিয়ে ফেলেন থানা এলাকার বাসিন্দা শংকরভগবান মাহাতো। পরে ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, ফোনটি আড়শা থানার নয়া মোড়ের বাসিন্দা বিষ্ণু কুমারের কাছে আছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ জানায়। বিষ্ণুকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। উদ্ধার হয় মোবাইল ফোনটি। পুলিশের দাবি, যেহেতু মোবাইল ফোনটি পাওয়া গিয়েছে তাই অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর গত শনিবার রাতে বিষ্ণু আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা সিরকাবাদ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, মোবাইল চুরির অভিযোগে থানায় ডেকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। তার জেরেই বিষ্ণুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্ত্রী নমিতা কুমারের। এই ঘটনায় রবিবার একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে আড়শা থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটি ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের মন্তব্য ফুসফুস, কিডনি এবং হৃদপিণ্ডের রোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। যদিও এই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিশ্বাস করেনি মৃতের ভাই সমন কুমার।
এই ঘটনায় পুরুলিয়া পুলিশ সুপার অভিজিত বন্দোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মৃতের শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। সুরতহাল থেকে ময়নাতদন্ত পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে জানিয়েছে। পরিবারের অভিযোগের বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এদিকে এই ঘটনায় লাশের রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি। এই অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিলে যে অরাজকতা তৈরি হয়ে তার মূলে গেরুয়া শিবির। এমনটাই অভিযোগ শাসক দলের নেতাদের।