কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। অথচ ‘আইনের ফাঁকে’ প্রায় সব ক্ষেত্রেই জামিন পেয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্তেরা। ফের অন্য কেউ প্রতারণার ফাঁদ পাতছে।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক মানছেন, প্রতারণার ক্ষেত্রে যে ধারায় মামলা রুজু করা হয়, তা জামিন যোগ্য হওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। তবে ওই ঘটনাগুলিকে সংগঠিত অপরাধের মধ্যে ফেলা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকদের নিশানা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তাই ওই প্রকল্পের পুরুলিয়ার প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডিআরডিসি) কমল দে এ ব্যাপারে গোষ্ঠীর সদস্যাদের সচেতন করতে প্রচারে জোর দেবেন বলে জানাচ্ছেন। পুলিশও একই পরিকল্পনা নিচ্ছে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) রোহেদ শেখ বলেন, ‘‘প্রতারণা ঠেকাতে ব্লক প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কী ভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের আরও সজাগ করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে”।
রঘুনাথপুর শহর ও সাঁওতালডিহির ঘটনায় অভিযুক্তেরা জামিন পেলেও মামলা চলছে। কিন্তু প্রতারিত মহিলারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাঁদের ঋণের টাকা প্রতারকদের নগদে দেওয়ার দাবি করলেও কোনও প্রমাণ রাখেননি। ফলে তদন্তকারীরা সমস্যায় পড়েছেন। সূত্রের খবর, পাড়া থানা এলাকায় শুধু পাঁচ লক্ষাধিক টাকা এক মহিলা অনলাইনে প্রতারকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন।
জেলা পুলিশের ওই আধিকারিক জানাচ্ছেন, তদন্তে কোটি, কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তার কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওই পুলিশ কর্তা জানাচ্ছেন, যদি দেখা যায় প্রতারণা করে সেই টাকায় প্রতারকেরা স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি তৈরি করেছেন, তাহলে ঘটনাটিকে সংগঠিত অপরাধের মধ্যে ফেলার সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে আদালতের নির্দেশে প্রশাসন সেই সম্পত্তি ক্রোক ও নিলাম করে সংগৃহীত অর্থ প্রতারিতদের ফিরিয়ে দিতে পারবে।
অন্য দিকে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আয়ের জন্য নানা প্রকল্পের কথা সরকার ঘোষণা করলেও, তাঁরা কেন বার বার প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন, সে প্রশ্নও উঠছে। তবে কি প্রকল্প থাকলেও প্রশাসনিক নিয়মের জটিলতা তার সুফল অধরাই থাকছে মহিলাদের কাছে?
যদিও প্রশাসনের দাবি, শুধু সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েই মহিলারা স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক তৈরি করে লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া সহজ কিস্তিতে তাঁদের ঋণ দেওয়াও হয়। সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ওই গোষ্ঠীর মহিলাদের অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে প্রশাসনের কাছে। তারপরেও কেন ওই মহিলারা ঋণের প্রলোভনে পড়ছেন বোধগম্য হচ্ছে না প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের। তবে পুলিশের মতে, এ সব ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তির টাকা প্রতারকেরাই দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই সহজে ফাঁদে পড়ে যান মহিলারা।
পুরুলিয়ার প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডিআরডিসি) কমল দে বলেন, ‘‘এত দিন ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন বা পঞ্চায়েতও বিষয়টি জানতে পারল না! আশ্চর্যজনক ব্যাপার।’’ তিনি জানাচ্ছেন, নাবালিকা বিবাহ, পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত বহু বিষয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছে সচেতনতা প্রচার করা হয়।এ বারে ওই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে যাতে মহিলারা না পড়েন সেটাও সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রচারেআনবেন তাঁরা।