• কোন রাজ্যে কত জাল জবকার্ড বাতিল? সংসদে পরিসংখ্যান দিয়ে জানাল কেন্দ্রীয় সরকার, এক নম্বরে যোগীর উত্তরপ্রদেশ
    আনন্দবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫
  • গত তিনটি অর্থবর্ষে দেশের কোন রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কত ভুয়ো জবকার্ড বাতিল হয়েছে? দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যওয়ারি গ্রেফতারের সংখ্যাই বা কত? কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখযানে দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো জবকার্ড বাতিলে সবচেয়ে প্রথমে নাম রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের! অনেক পরে নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের।

    কেন্দ্রের প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে দেশে মোট ভুয়ো জবকার্ড বাতিলের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৬২। তার মধ্যে শুধু উত্তরপ্রদেশেই বাতিল হয়েছে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৫৪টি জবকার্ড। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে জবকার্ড বাতিলের সংখ্যা ৫ হাজার ২৬৩। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে বাতিল হয়েছিল ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৯৭টি জবকার্ড। সে বার বাংলায় বাতিলের সংখ্যা ছিল ৭১৯টি। ২০২৫-’২৫ অর্থবর্ষে সারা দেশেই সংখ্যাটি কমে। উত্তরপ্রদেশে বাতিল হয় ৩ হাজার ৪২১টি জবকার্ড। বাংলায় বাতিলের সংখ্যা ছিল মাত্র দু’টি। শুধু উত্তরপ্রদেশই নয়, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যই ভুয়ো জবকার্ড বাতিলের সংখ্যায় অনেক এগিয়ে।

    প্রসঙ্গত, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষ থেকেই বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। যাকে রাজনৈতিক ভাবে বাংলার বিরুদ্ধে ‘বঞ্চনা’ বলে ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ করে আসছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে প্রচারের অন্যতম ভাষ্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। সোমবার ২১ জুলাইয়ের সভা থেকেও ১০০ দিনের কাজ-সহ আবাস, গ্রাম সড়ক যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার টাকা আটকে রাখা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের প্রশ্ন, অন্য রাজ্যেও ভুয়ো জবকার্ড ছিল। বাংলার চেয়ে তা বহুগুণ বেশি। তা হলে সেই রাজ্যে বরাদ্দ বন্ধ না-হলে বাংলায় বন্ধ রাখা হয়েছে কেন? যাকে ‘রাজনৈতিক ভাবে বাংলার মানুষকে ভাতে মারার বিজেপি-র যড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছে তৃণমূল।

    গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে মালার প্রশ্নের লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসোয়ান লিখিত ভাবে তৃণমূল সাংসদের প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছেন, তাতেই রয়েছে ভুয়ো জবকার্ড বাতিলের পরিসংখ্যান। যদিও কোন রাজ্যে কত গ্রেফতার, সেই পরিসংখ্যান কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী তাঁর জবাবে জানিয়েছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন, তাতে অনিয়ম হলে ফৌজদারি পদক্ষেপ গ্রহণ— এই সব রাজ্যের বিষয়। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্র কোনও তথ্য জানাতে পারে না।

    প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রের দেওয়া এই পরিসংখ্যানের পরে ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ নিয়ে আরও সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। দলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এর আগের মেয়াদেও কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে ভুয়ো জবকার্ডের পাহাড় ছিল। বাংলার সংখ্যা সেই তুলনায় নগণ্য। এক দিকে বিজেপি বাংলায় কাজ করলে শ্রমিকদের টাকা দিচ্ছে না। আর কাজের জন্য অন্য রাজ্যে গেলে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলছে। এর থেকেই স্পষ্ট বিজেপি বাংলা-বিরোধী।’’ যদিও বিজেপি মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বরাদ্দ বন্ধের কারণ শুধু ভুয়ো জবকার্ড নয়। এই প্রকল্পগুলিতে প্রতিটি রাজ্যকে কেন্দ্রের কাছে হিসাব পেশ করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেটাই করেনি। সঠিক হিসাব পেশ করলে নিশ্চয়ই টাকা পাবে।’’

    উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিল সিপিএমের গণসংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি’। সেই মামলায় গত মাসে হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১ অগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে আবার ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে। আদালত জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ শুরু করার জন্য যে কোনও শর্ত আরোপ করতে পারবে কেন্দ্র। কিন্তু কাজ আটকে রাখা যাবে না। আদালত এ-ও বলেছে, এই প্রকল্প সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ ২০২২ সালের আগের। তা নিয়ে যা খুশি পদক্ষেপ হোক, তা আদালতের বিচার্য নয়। কিন্তু মানুষের স্বার্থে প্রকল্পের কাজ চালু করতে হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)