আমার কী হবে? বন্ধ অ্যাকাউন্ট খুলতে বিচারপতি সিংহের দ্বারস্থ কলকাতা হাই কোর্টের লজেন্স বিক্রেতা! মামলা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে
আনন্দবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫
রাস্তায় একটি চটের বস্তা বিছানো। তার উপর কিছু লজেন্স, চকোলেটের প্যাকেট, সিগারেট এবং আরও টুকিটাকি সাজিয়ে রাখা। কলকাতা হাই কোর্টের মূল ভবনের মধ্যে ১০-১১ নম্বর কোর্টরুমে যাওয়ার পথে ওটাই সবিতা পালের দোকান। আইনজীবী থেকে মামলাকারীরা তাঁর কাছ থেকে এটা-ওটা কেনেন। যাঁদের নিত্যদিন আদালতে যাতায়াত, তাঁদের কাছে সবিতা ‘হাই কোর্টের মাসি’ বলে পরিচিত। এ হেন বৃদ্ধা ওই দোকান থেকে যা উপার্জন করেন, তার একটি অংশ জমা রাখেন ব্যাঙ্কে। অ্যাকাউন্টটি পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের একটি শাখায়। কিন্তু হঠাৎ সবিতা দেখেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। সেই ‘লক’ খুলতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বৃদ্ধা। মামলা করলেন ভারত সরকার এবং আধার কর্তৃপক্ষ বা ইউআইডিএআই-র বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সবিতার মামলা গ্রহণ করেছে উচ্চ আদালত। আধার কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব তলব করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ।
সবিতার দাবি, তাঁর কেওয়াইসি ‘আপডেট’ হয়নি বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে দিয়েছেন। অ্যাকাউন্ট খোলার খোলার জন্য তিনি জন্মের শংসাপত্র জোগাড় করেছেন। ব্যাঙ্কের পরামর্শ মতো আধার কার্ড সংশোধন করতে গিয়েছেন। কিন্তু আধার কর্তৃপক্ষ ওই শংসাপত্র গ্রাহ্য করেননি। কারণ, সেটি নতুন করে তৈরি। অন্য দিকে, বৃদ্ধার পুরনো কোনও শংসাপত্র নেই।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সবিতাকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করার পিছনে কারণ ‘তারিখ’। প্রৌঢ়ার আধার কার্ড এবং প্যান কার্ডের জন্ম সাল আলাদা। একটিতে জন্ম সাল ১৯৫৫, অন্যটিতে ১৯৬৭। সবিতার দাবি, ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক তাঁকে বলেছেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, কেওয়াইসি সংশোধন করতেই হবে। না-হলে প্রবীণ নাগরিক হিসাবে সুদ-সমেত যা টাকা তিনি পেতে পারেন, তা পাবেন না। উপায়? আধার কার্ডের জন্ম সাল সংশোধন।
অন্য দিকে, আধার কার্ডে জন্ম সাল সংশোধন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ওই গরিব বৃদ্ধা। কেওয়াইসি ‘আপডেট’ করতে গিয়ে সবিতা দেখেছেন, ‘আপডেট’ নিচ্ছে না সিস্টেম। ব্যাঙ্কের দাবি, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। কেওয়াইসি পোর্টাল স্বয়ংক্রিয় ভাবে কিছু কাজ করে। জন্ম সাল সংশোধন ছাড়া কোনও উপায় নেই। সবিতার দাবি, তিনি জন্মেছেন ১৯৫৫ সালে। সে হিসাবে তিনি প্রবীণ নাগরিক। কিন্তু সেই সন-তারিখ সংশোধন করতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। আধার কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কিংবা জন্ম শংসাপত্র চেয়েছিলেন। সবিতা দিতে পারেননি। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেননি। আর অন্য কোনও শংসাপত্রও নেই। উপায়ন্তর না-দেখে নতুন করে শংসাপত্র তৈরি করেন। কিন্তু সেটা খারিজ করে দিয়েছে আধার অফিস। এখন উপায় কী? সমাধান চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছেন আদালত চত্বরের দোকানদার সবিতা।
মঙ্গলবার মামলাকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদ বিচারপতি সিংহের এজলাসে বলেন, ‘‘প্রবীণ নাগরিক হিসাবে সবিতাকে মানতে যদি আপত্তি থাকে, তাঁকে এজলাসে আনতে পারি।’’ সওয়াল শোনার পরে বিচারপতি সিংহ আধার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আধার কর্তৃপক্ষ বলুক, এই মহিলার কী হবে? তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘লক’ হয়েই থাকবে? তিনি কি প্রবীণ নাগরিক হিসাবে ব্যাঙ্কের সুবিধা পাবেন না?’’
ব্যাঙ্ক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কেওয়াইসি ছাড়া সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। এখন উপায় কি? হাই কোর্টের দিকে তাকিয়ে দোকানদার সবিতা।