দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা শহিদ বেদিগুলির সংস্কারের কাজ শুরু হল
বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: বছরের পর বছর ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা শহিদ বেদির সংস্কার অবশেষে শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া নদীয়া জেলার বীর শহিদদের স্মরণে নির্মিত এই বেদি অবশেষে স্থানীয় প্রশাসনের সৌজন্যে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের আগে এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। শহরের মানুষ আশাবাদী, সংস্কারের পরে শহিদ বেদিগুলি ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব ও মর্যাদা। সেই সঙ্গে জায়গাটি পর্যটন তালিকাতেও জায়গা করে নেবে। শহিদবেদি শুধুমাত্র স্মারক নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, আত্মত্যাগ এবং জাতীয়তাবোধের এক জীবন্ত নিদর্শন। তাই এই উদ্যোগকে স্থায়ী এবং ফলপ্রসূ করতে হলে নিয়মিত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন চত্বরে পাঁচজন শহিদের স্মরণে বেদি করা আছে। এরমধ্যে চারটি বেদি শহিদ সতীশ সর্দার, শহিদ অনন্তহরি মিত্র, শহিদ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং শহিদ নিত্যানন্দ সাহার। এই চারটি বেদি ১৯৭৩ সালেই তৈরি করা হয়। এরপর ২০১১ সালে শহিদ বসন্ত বিশ্বাসের স্মরণে বেদি তৈরি হয়। তারমধ্যে চারটি বেদিতে শহিদদের মূর্তি রয়েছে। কিন্তু, সতীশ সর্দারের কোন ছবি না পাওয়া যাওয়ায় তাঁর বেদিতে কোনও মূর্তি নেই। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৩২ সালের ১৯ জুন বিপ্লবী সতীশ সর্দার খাজনা বন্ধ আন্দোলন ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। মুক্তি সংগ্রামী শহিদ নিত্যানন্দ সাহা গোয়া মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পর্তুগিজ পুলিশের গুলিতে ১৯৫৫ সালের ৩ আগস্ট শহিদ হন। বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বুড়িবালাম নদীর তীরে ব্রিটিশ পুলিস বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে জখম হন। পরে ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ওড়িশার বালেশ্বর হাসপাতালে মারা যান। বিপ্লবী অনন্তহরি মিত্র দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় জেলখাটার সময় উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মীকে হত্যার অভিযোগে ১৯২৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে শহিদ হন। বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস মাত্র ২২ বছর বয়সে দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলায় ১৯১৫ সালের ১১মে পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে ফাঁসির মঞ্চে শহিদ হন। এই শহিদবেদি চত্বর বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়েছিল। ভাঙা রেলিং, বিবর্ণ রং, মলিন নামফলক, আগাছায় ঢাকা চারপাশ, নোংরা জলের ফোয়ারা সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা ছবি ফুটে উঠেছিল। সম্প্রতি জেলা পরিষদ ও জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে শহিদ বেদির সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ। সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব পাওয়া এক ঠিকাদার বলেন, চারিদিক ঢালাই করা হচ্ছে। এর উপরে মার্বেল বসানো হবে। ফোয়ারা সুন্দর করে সাজানো হবে। বেদিগুলি রং করা হবে। চারপাশে লাইট লাগানো হবে। বেদির পিছনের দেওয়ালজুড়ে স্বাধীনতার কিছু ছবি আঁকা হবে। উপরে জাল দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ আগস্টের আগেই কাজ শেষ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশিস হালদার বলেন, স্বাধীনতার শহিদদের প্রতি নতুন করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বলে আমি মনে করছি। নদীয়া জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। জেলাশাসকের উদ্যোগে পিএইচই দপ্তর দায়িত্ব নিয়ে শহিদবেদি চত্বর সংস্কারের কাজ করছে।