• পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে স্ত্রীকে গুলি, গ্রেপ্তার অভিযুক্ত স্বামী
    বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতেই জখম হয়েছেন স্ত্রী। হাসপাতালে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেন স্বামী। চরম অস্থির তিনি। দেখলেই মনে হবে, স্ত্রী অন্ত প্রাণ। যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে ভালোবাসার মানুষটিকে। কিন্তু সবটাই নাটক! স্বামীর চালাকি ধরে ফেলে পুলিস। জানা যায়, স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে মারাও যান স্ত্রী। নাটকের প্লট সাজিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মহিলার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে নাকাশিপাড়া থানার পুলিস। 

    সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নাকাশিপাড়া থানার অন্তর্গত বিলকুমারী পঞ্চায়েতের কালীবাস এলাকায়। মৃত স্ত্রীর নাম মহিলা দফাদার (৩৮)। অভিযুক্ত স্বামী হায়দার শেখ। মঙ্গলবার ধৃত হায়দারকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয় তাকে। প্রাথমিকভাবে পুলিস জানতে পেরেছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই সাংসারিক বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটেছে।‌ মঙ্গলবার রাতে এখনও পর্যন্ত খুনে ব্যবহৃত পিস্তলটি বাজেয়াপ্ত করা যায়নি। নাকাশিপাড়া এলাকায় হায়দার কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবেই পরিচিত। 

    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, ‘নাকাশিপা‌ড়ার ঘটনায় আমরা স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছি। তার বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক মামলাও রয়েছে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে পুলিসি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।‌’

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চার-পাঁচ আগে ধনঞ্জয়পুর পঞ্চায়েতের ধাপাড়িয়ার বাসিন্দা হায়দার শেখের বিয়ে হয় বিলকুমারি পঞ্চায়েতের মহিলা দফাদারের সঙ্গে। মাস চারেক আগে পুরনো একটা ঘটনায় জামিনে ছাড়া পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিল হায়দার। সেখানেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকছিল। সোমবার রাত দশটা নাগাদ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যাপক অশান্তি হয়। সেইসময় স্ত্রী পালিয়ে গিয়ে পাশেই নিজের দাদার বাড়িতে ওঠে। পিছু নেয় হায়দার। ঘরের দারজার সামনেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিজের সেভেন এমএম পিস্তল দিয়ে গুলি করে সে। চোখের ঠিক উপর দিয়ে সেই গুলি ঢুকে মাথার বাঁদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলির আওয়াজ শুনে মহিলার দাদা ও তার পরিবারের লোকজন বেরিয়ে আসেন। দেখেন হায়দারের হাতে পিস্তল রয়েছে। তৎক্ষণাৎ সে বাইরে পালিয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ বাদে ফিরে আসে।‌ তখন তার হাতে পিস্তলটি ছিল না। পায়ে কাদা লেগেছিল। অভিযোগপত্রে এমনটাই জানিয়েছেন মৃতের ভাইপো মিনহাজ দফাদার। 

    প্রাথমিকভাবে হায়দার স্থানীয় লোকজনকে জানায়, পাশের বাড়ির ছাদ থেকে কেউ গুলি চালিয়েছে।‌ সে তখন নিজেই স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় যায় নাকাশিপাড়া থানার পুলিস। যদিও শুরুর দিকে পরিবারের আত্মীয়রা হায়দারের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ ছিল। অবশেষে মৃতের ভাইপো জানায়, সে হায়দারের হাতে রিভলভার দেখেছিল। পাশাপাশি পুলিসের সন্দেহ হয়, কারণ পাশের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালালে তা মাথায় লাগা কার্যত অসম্ভব। 

    সেই সন্দেহের জোরে পুলিস হাসপাতাল থেকে হায়দারকে আটকে করে আনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তাঁর স্ত্রী ওই রাতে  বাইরে বেরিয়েছিল। তখন তাঁর সঙ্গেই ছিল হায়দার। সেইসময় দুষ্কৃতীরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। কিন্তু সেই গুলি গিয়ে লাগে তাঁর স্ত্রীর কপালে। যদিও এই গল্প ফেঁদে লাভ হয়নি তাঁর। অবশেষে পুলিসের কাছেই খুনের কথা স্বীকার করে নেয় হায়দার। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)