বাংলার অহঙ্কার সৌভ্রাতৃত্ব রাখীবন্ধনে জোর নবান্নের, কবিগুরু-নজরুলকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও রাখী মজুতের নির্দেশ
বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৫
উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: বাংলায় সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে এবারে ঘটা করে রাখি বন্ধন উৎসব ও সংস্কৃতি দিবস পালনের নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশপাশি অনুষ্ঠানস্থলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ছবিতে মাল্যদান করতে হবে। মহিলাদের উপস্থিতি বেশি করতে হবে। পর্যাপ্ত রাখি ছাড়াও মিষ্টি বিতরণ করা হবে। তারজন্য প্রতিটি ব্লক ও পুরসভাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিটকে এক হাজার করে রাখি দেওয়া হবে। রাজ্যের যুবকল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় এমনই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। শুধু ব্লক অথবা পুরসভা নয়। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, জিটিএ এবং জেলা সদরেও একইভাবে অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৬৩৯টি জায়গায় সরকারিভাবে উৎসব ও সংস্কৃতি দিবস পালন করা হবে।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, জেলা সদর ছাড়াও ২২টি ব্লক ও তিনটি পুরসভায় রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতে বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সব জায়গায় একই ধাঁচে উৎসব ও দিবস পালনের জন্য বলা হয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টায় গোটা রাজ্যে একই সঙ্গে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। প্রতিটি অনুষ্ঠান স্থলে ৩০ ফুট বাই ১০ ফুট মাপের প্যান্ডেল বাঁধতে হবে। মাইকে সারাদিন কেবলমাত্র ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দপ্তরের অনুমোদিত দেশাত্মবোধক গান বাজাতে হবে। প্যান্ডেলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের একটি করে মাল্যশোভিত প্রতিকৃতি রাখতে হবে। দপ্তর থেকে প্রতিটি ইউনিটকে এক হাজার করে রাখি দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে সর্বধর্ম নির্বিশেষে মহিলা এবং সাধারণ মানুষকে বেশি করে শামিল করাতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করতে হবে। রাখি পরানোর পর উপস্থিত সকলকে মিষ্টি বিতরণ করতে হবে। এভাবেই এবারের রাখি বন্ধন উৎসব ও সংস্কৃতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তালডাঙরার শিল্পী বিকাশ কুম্ভকার বলেন, গত বছর আমি টেরাকোটার রাখির ডিজাইন করেছিলাম। পাঁচমুড়ার এক মৃৎশিল্পী পোড়ামাটির রাখি তৈরি করেছিলেন। তার ভীষণ চাহিদা তৈরি হয়েছিল। সুন্দর প্যাকেজিং করে তা প্রশাসনকে দিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, খোলা বাজারেও প্রচুর চাহিদা বেড়েছিল। শেষ মুহূর্তে আর জোগান দিতে পারিনি। তাই এবারে কিছুটা আগে থেকেই টেরাকোটার রাখি তৈরি করা হচ্ছে। তাঁর জন্য একাধিক মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো হয়েছে।
পাঁচমুড়ার এক মৃৎশিল্পী বলেন, টেরাকোটার নানা ধরনের জিনিস আমরা তৈরি করি। তবে টেরাকোটার রাখি গতবছর প্রথম করেছিলাম। মানুষের ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। বিপুল চাহিদা বেড়েছিল। এবারেও তা তৈরির কাজ চলছে।
বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ বলেন, আমাদের বাংলা বরাবর দেশকে সৌভাতৃত্ব এবং সাম্যের পথ দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে একটি রাজনীতিক দল সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিকভাবেই তা প্রতিহত করবে। এবারের রাখিবন্ধন উৎসবে সাধারণ মানুষ আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতার চক্রান্তের বিরুদ্ধে শপথ নেবে।