মানিকচকে বালির বস্তার বাঁধ কেন, ঘেরাও আধিকারিক, বিপদসীমা ছুঁল গঙ্গা, ভাঙন রোধে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ সেচকর্তারা
বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, মানিকচক: সোমবার তাড়া খাওয়ার পর মঙ্গলবারও জনতার বিক্ষোভের মুখে সেচ আধিকারিকরা। ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর পর প্রবল ক্ষিপ্ত বাসিন্দাদের বিক্ষোভের সামনে এদিনও ভূতনিতে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করতে পারল না সেচদপ্তর। সেচ আধিকারিক, ঠিকাদার ও পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। এরই মধ্যে ভাঙন অব্যাহত রতুয়া এক ব্লকের পশ্চিম রতনপুর গ্রামে।
অন্যদিকে, বাঁধ নিয়ে বিক্ষোভের মাঝে মানিকচকে বিপদসীমা পেরল গঙ্গা। মঙ্গলবার সকালে গঙ্গার জলস্তর ২৪.৬৫ মিটার ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় তা ২৪.৬৯ মিটারে পৌঁছয়। যা বিপদসীমার সমান বলে জানান জেলা সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
রতুয়া-১ ব্লকের পশ্চিম রতনপুর গ্রামে লাগাতার ভাঙন চলছে। যার জেরে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে গ্রাম। এরকম ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রুখতে এসেছিল সেচদপ্তর। কোশি নদীর জলে তলিয়ে যাচ্ছিল একের পর এক ভিটে। যার জেরে ক্ষোভ বাড়ছিল পশ্চিম রতনপুরে। সোমবার সেই ক্ষোভে বালির বস্তা দিয়ে কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ভূতনির উত্তর চণ্ডীপুরের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধ দিতে হবে। এই দাবিকে সমর্থন করে তাঁদের পাশে দাঁড়ান পশ্চিম রতনপুরের বাসিন্দারাও। তারা দলবেঁধে লাঠি, বাঁশ নিয়ে এসে কাজই বন্ধ করে দেন। সোমবার কাজ বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন মালদহ জেলা সেচদপ্তরের আধিকারিক সহ ঠিকাদার ও পুলিস। পশ্চিম রতনপুর সংলগ্ন নতুন রিংবাঁধের ওপর স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করতে যান তাঁরা। দ্রুত ভাঙন রোধের কাজের আশ্বাস দেওয়া শুরু করলেই উত্তর চণ্ডীপুরের শতাধিক বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেচদপ্তরের আধিকারিক সহ ঠিকাদারদের ঘিরে ধরেন তাঁরা। শুখা মরশুমে কেন কাজ হয়নি, কেন বালির বস্তার বদলে বোল্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে না,জবাব চাইতে শুরু করেন স্থানীয়রা। সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয়দের আবেদন করেন দ্রুত কাজ শুরু না করলে ভাঙন আরও বাড়বে। কিন্তু তা না শুনে বাসিন্দারা প্রায় একঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে রতুয়া ও ভূতনি থানার পুলিস আধিকারিক থাকলেও জনতার বিক্ষোভের সামনে কিছুই করতে পারেননি। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় শেষমেশ আলোচনা ভেস্তে যায়। স্থানীয় আবু তাহির আলি বলেন, এখানে ভাঙন রোধের কাজের নামে শুধু টাকা লুট হচ্ছে। আমরা বারবার শুখা মরশুমে কাজের আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু আধিকারিকরা ভাঙনের সময়ই কাজ করেন। আমরা বোল্ডারের কাজ চাই। নাহলে কাজ করতে দেব না।
এবিষয়ে ঠিকাদার সংস্থার মালিক মদন ঝা বলেন, আমরা শিডিউল অনুযায়ী আধিকারিকদের নির্দেশমতো কাজ করছি। কিন্তু উত্তর চণ্ডীপুরের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা কাজ বন্ধ করতে চাইছেন।
শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। বাসিন্দারা বোল্ডারে মাধম্যে কাজের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু তা সম্ভব নয়। সেই ধরনের কাজ আগেই বন্ধ হয়েছে। দপ্তরের কিছু নিয়ম রয়েছে। সেটা মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এখন বাধা দিলে ভাঙনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এর মধ্যে গঙ্গার জলস্তর বাড়ায় ভূতনির উত্তর চণ্ডীপুরের কালুটনটোলা, বসন্তটোলার মত অসংরক্ষিত গ্রামগুলি জলমগ্ন হয়েছে। গোপালপুরের ভেঙে যাওয়া রাস্তায় একটি অস্থায়ী রিং বাঁধ করে জল থামানো হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।