• দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন অসুস্থ, প্রয়াত নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম মুখ আজিজুল হক
    হিন্দুস্তান টাইমস | ২১ জুলাই ২০২৫
  • প্রয়াত হলেন প্রাবন্ধিক, বক্তা ও বিশিষ্ট বামপন্থী চিন্তক আজিজুল হক। দীর্ঘদিন বার্ধক্য ও নানা শারীরিক জটিলতার সঙ্গে লড়াইয়ের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ সোমবার দুপুর ২টা ২৮ মিনিট নাগাদ সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। শেষ কয়েক সপ্তাহে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছিল। বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। সংক্রমণ ছড়ায় রক্তে, দিতে হয় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট। একের পর এক অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েন।


    আজিজুল হক শুধু একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না। ছিলেন এক সময়ের ইতিহাসের নিরব সাক্ষী, ছিলেন জেল-নির্যাতন-প্রতিবাদের এক জীবন্ত দলিল। নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বাধীন মুখ হিসেবে চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর সিপিআই -এর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলান তিনি। তাঁর লেখা ‘কারাগারে ১৮ বছর’ বইটি শুধু একটি আত্মজীবনী নয়, সেই সময়ের বাম রাজনীতির, দমন-পীড়নের ও রাজনৈতিক বন্দিত্বের এক নিষ্ঠুর বাস্তব দলিল। তাঁর জীবনের অনেকটা সময়ই কেটেছে কারাগারে। বিতর্কিত মামলায় গ্রেফতার হওয়া, পুনরায় আটক হওয়া এবং দীর্ঘদিনের জেলবাস ছিল তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেলেও ফের ১৯৮২ সালে গ্রেফতার হন। জেলবন্দি অবস্থায় তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচারের ঘটনা সে সময় সাড়া ফেলে দেয়। প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীরা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও যতীন চক্রবর্তী। কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও তাঁর ক্ষতচিহ্ন দেখে শিউরে ওঠেন বলে সূত্রের খবর।

    জেলের মধ্যেই লিখে ফেলেন নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি। তাঁর সহবন্দীদের হত্যা, প্রতিদিনের মানসিক চাপ, সকালে লাঠির আঘাতে ঘুম ভাঙা বা পচা খাবারের বেদনা, সবই উঠে এসেছে এই বইয়ে। ‘আজকাল’ পত্রিকার এক সাংবাদিকের সহায়তায় বইটি পুলিশের নজর এড়িয়ে বাইরে আনা সম্ভব হয়।

    রাজনৈতিক জীবন থেকে অনেক আগে সরে এলেও কলম ছাড়েননি। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং ‘আজকাল’-এ নিয়মিত লিখে গিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি’। চিন্তায় ও আদর্শে আজীবন ছিলেন আপসহীন। আজিজুল হকের প্রয়াণে নিভে গেল এক অনমনীয় প্রতিবাদী কণ্ঠ। তাঁর মৃত্যু যেন এক রাজনৈতিক চেতনার অবসান, যেখানে আদর্শের জন্য জীবন বাজি রাখাই ছিল মূল পরিচয়।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)