হাইকোর্টের ‘পরীক্ষায়’ পাশ কলকাতা পুলিশ, যান নিয়ন্ত্রণে সন্তুষ্ট আদালত
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ জুলাই ২০২৫
২১ জুলাই শহরের বুকে তৃণমূল কংগ্রেসের বার্ষিক শহিদ দিবসের সভা ঘিরে যানজট ও নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ছিল হাইকোর্ট। তাই সমাবেশের দিন সকালে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ও জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটাতে পুলিশকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার সকাল থেকেই সেই নির্দেশ কতটা মানা হচ্ছে, তার উপর নজর ছিল আদালতের। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের ‘পরীক্ষা’য় সফলভাবে উত্তীর্ণ হল কলকাতা পুলিশ। যান নিয়ন্ত্রণে সন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতিরা।
হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এদিন বলেন, ‘ভালোভাবে যান নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করেছে।’ আদালতে এক আইনজীবী জানান, নিউ আলিপুর থেকে হাইকোর্ট পৌঁছতে সোমবারও সাধারণ দিনের মতোই ২০-২৫ মিনিট সময় লেগেছে। তারপরেই বিচারপতি জানান, এথেকে স্পষ্ট, শহরে ট্র্যাফিকের বড় কোনও সমস্যা হয়নি।
সকাল থেকেই কলকাতা পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল শহরের নানা প্রান্তে। ব্যারিকেড দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় ধর্মতলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার একাধিক রাস্তা। বহু রুটে বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বিকল্প পথে। যান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে রাস্তায় গাড়ির কম উপস্থিতিও। তবে বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অ্যাপ ক্যাবও সহজে মেলেনি, ফলে যাত্রীদের একটা বড় অংশ নির্ভর করেছিলেন মেট্রোর উপর। এতে চরম ভিড়ের চাপে নাজেহাল হতে হয়েছে বহু অফিসযাত্রীকে।
সপ্তাহের শুরুতে এমনিতেই অফিস টাইমে মেট্রোতে চাপ থাকে। তার উপর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ মেট্রো ধরে ধর্মতলা বা তার আশপাশে পৌঁছান। ফলে সোমবার সকাল থেকেই সব স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড়। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রতি স্টেশনে বেশি সময় ধরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে মেট্রো রেক। দরজা বন্ধ করতেই সময় লেগেছে। টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লাইন। কিছু স্টেশনে ভিড় সামলাতে পুলিশও মোতায়েন করতে হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক মিছিল করা যাবে না। সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও বড় মিছিল হয়নি শহরে। তবে ধর্মতলার দিকে বহু রাস্তার ধারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃণমূল সমর্থকরা অবস্থান নিয়েছেন রাত থেকেই। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে রান্নাবান্না ও পাত পেড়ে খাওয়ার ছবি ধরা পড়েছে। শিয়ালদহ, মৌলালি, রাজাবাজার – এসব এলাকাতেও দেখা গিয়েছে ব্যারিকেড ঘেরা জোনে জমায়েত, তবে পুলিশ তা সামাল দিয়েছে নিয়ন্ত্রিত ভাবেই।
যদিও রাস্তায় যানজট ছিল না, তবুও সাধারণ মানুষদের একাংশের অভিযোগ, পর্যাপ্ত বাস বা ক্যাব না থাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। অনেকেই এদিন বাড়ি থেকে বের হননি অপ্রত্যাশিত ভোগান্তির আশঙ্কায়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসরণ করে যে শহরে যানজট হয়নি, সে বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আদালত তা মেনেও নিয়েছে। চাপের দিনে শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সামলাতে গিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সোমবার, ২১ জুলাই তৃণমূলের সভার দিনে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পুলিশ যে সুষ্ঠুভাবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে, তা আদালত নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে।