বাংলায় রাম নাম নিলেন না কেন? মোদীকে কটাক্ষ তৃণমূলের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ জুলাই ২০২৫
বিজেপিশাসিত রাজ্যে চলে ‘রাম’ বন্দনা। তবে বাংলায় আসতেই এবার উলটপুরাণ! সুদীর্ঘ বছরের অভ্যেস এবং দলীয় এজেন্ডা সরিয়ে বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জয় শ্রীরাম’-এর বদলে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বললেন ‘জয় মা দুর্গা’, ‘জয় মা কালী’। প্রধানমন্ত্রীর মুখে দুর্গা-কালীর নাম শুনেই কটাক্ষের ঝড় তুলল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘একবারও রামচন্দ্রকে স্মরণ করলেন না! মা দুর্গার মূর্তি পেয়েছেন, ভালো থাকুন এবং দেশ ভালো থাকুক। মনে রাখবেন, আজ মমতা বন্দোপাধ্যায়ই মৃন্ময়ী রূপে মা দুর্গাকে ইউনেস্কো পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন এবং এই উৎসবকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই পরিবর্তনটাও আমরা আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।’ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘রামকে আমরাও শ্রদ্ধা করি কিন্তু রামকে নিয়ে রাজনীতি করি না। বাংলায় আসতে আসতে নরেন্দ্র মোদীরই পরিবর্তন হয়ে গেল! আদতে এটাই বাংলার মাটি, আপনাকে আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরিবর্তন হবেন না।’ এরই সঙ্গে চন্দ্রিমা সুর চড়িয়ে বলেন, ‘ছাব্বিশের নির্বাচনে পঞ্চাশটা সিটও পাবেন না, মিলিয়ে নেবেন।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার দুর্গাপুরে এসে বাংলা ভাষাতেই তাঁর বক্তব্য শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই রেশ ধরেই ভিনরাজ্যে বাঙালি নির্যাতন ইস্যুতে আক্রমণ শানিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, বাংলাকে নিয়ে এতো ভালোবাসা! তাহলে বাংলাভাষীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চলছে কেন? চাপে পড়ে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন? আপনার এক মুখ্যমন্ত্রী বাঙালিদের বিদেশি বলছেন, প্রতিবাদ করলেন না কেন? কী কী বিকাশ বাংলার করেছেন, তার হিসেব দেবেন না? কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে, বিনিয়োগ সৃষ্টি-সহ একাধিক ক্ষেত্রে দেশে বাংলা শীর্ষে, এই তথ্য দুর্গাপুরে দাঁড়িয়ে বলতে ভয় পেলেন কেন? প্রধানমন্ত্রী, আপনি সংবিধানের কথা বলে রাইট টু মুভমেন্ট, রাইট টু স্পিচ আটকাচ্ছেন।’ এদিন বিহার থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বীরভূম হবে বেঙ্গালুরু এবং জলপাইগুড়ি হবে জয়পুর।’ চন্দ্রিমার কটাক্ষ, ‘অক্ষরের সঙ্গে অক্ষর মিলিয়ে উন্নয়ন হয় না। আদতে জেলাগুলি কেমন দেখতে, সেই জ্ঞান আছে? গোটা বাংলার উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই ছাব্বিশেও আবার তিনিই আসবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে আবার মিথ্যাচার করেছেন, অভিযোগ কুণালের। তাঁর ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করলেন। বাংলার বকেয়া ছাড়াই খালি হাতে এ রাজ্যে এসেছেন কেন? দৃশ্যমান বকেয়া দেন না, তবে অদৃশ্য পাঁচ হাজার কোটির ভুয়ো গল্প শুনিয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ বছরে ২২ কোটি চাকরি হওয়ার কথা, ১ কোটি চাকরিও হয়েছে? গোটা দেশে নারী নির্যাতন চলছে! প্রধানমন্ত্রীর অধিকার নেই বাংলায় এসে সমালোচনা করার, কারণ তাঁর রাজ্যে এগুলি নিত্যদিনের ঘটনা।’ ভোটমুখী বাংলায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কুণালের আক্রমণ, ‘দলবদলুদের দিয়ে পরিবর্তন আনবেন কীকরে?’ নাম না করে মিঠুন চক্রবর্তী এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে কুণালের বক্তব্য, ‘এক জলঢোঁড়া সাপ প্রধানমন্ত্রীকে প্রণাম করছেন, অপর এক দলবদলু বলছেন তিনি নাকি পরিবর্তন আনবেন। তৃণমূলের ঝাঁটা আজ আপনার দলে।’ গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ শিঙাড়া খাবে, ফিস ফ্রাই খাবে, জিলিপিও খাবে। খাদ্যের গুণমান যদি ঠিক থাকে সেখানে কোনও ফতোয়া মানা হবে না, এদিন আরও একবার স্পষ্ট করল তৃণমূল। শিঙ্গাড়া, ফিসফ্রাই এবং জিলিপি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই বার্তাই দিলেন কুণাল-চন্দ্রিমা।