‘আরও বেশি বাংলায় কথা বলব, ক্ষমতা থাকলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখো', মমতা বললেন পরিস্থিতি ‘মোর দ্যান ইমারজেন্সি’...
আজকাল | ১৬ জুলাই ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিন রাজ্যে বারবার অত্যাচার বাংলাভাষীদের। ওডিশা থেকে মহারাষ্ট্র, দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ, বাংলায় কথা বললেই দুর্ব্যবহার, অত্যাচার, আটক। দেশজুড়ে বাঙালিদের হয়রানির প্রতিবাদে আগেই সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল। একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছে, সেসব প্রশ্ন নিয়েই, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বুধবার পথে তৃণমূল কংগ্রেস। পথে মমতা-অভিষেক। মিছিল শেষ ডেরিনা ক্রসিংয়ে বক্তব্য রাখেন দলের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। বক্তব্য জুড়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেমন বিঁধলেন কেন্দ্র সরকারকে। তেমনই মনে করালেন, দেশ জুড়ে অকারণ বাঙালিদের উপর এই অত্যাচার মেনে নেবেন না তিনি। বক্তব্যে এদিন মমতা সাফ জানান, কোন পন্থায়, কীভাবে বাংলাকে হেনস্থা করার পরিকল্পনা করছে গেরুয়া শিবির।
এর আগেও তৃণমূল বারবার বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এদিন মমতা বলেন, ভারত সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করেছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করবেন তিনি। কী বলা হয়েছে নোটিফিকেশনে? তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে লুকিয়ে লুকিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলা ভাষায় কথা বলে, গ্রেপ্তার করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে সেখানে রেখে দেবে। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও রেহাই পাচ্ছেন না। পড়তে হচ্ছে হেনস্থার মুখে।
কেন্দ্রের কেন এত বাংলা বিদ্বেষ, কেন খুঁজে খুঁজে বারবার অপদস্থ করা হচ্ছে তাঁদের? এদিন সেই প্রশ্নই তোলেন মমতা। কিছু ক্ষেত্রে তথ্যও তুলে ধরেন। জানান এরাজ্যের ২২ লক্ষ মানুষ বাইরে কাজ করেন পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে। কাজ করেন নিজেদের যোগ্যতায়। সেই তাঁরা বারবার হেনস্থার মুখে পড়ছেন। সুর চড়িয়ে দলনেত্রী বলেন, ‘বাঙালিদের দিয়ে কাজ করাবে আর বাংলা ভাষায় কথা বললেই জেলে ভরবে। কোন অধিকারে? বাংলা কি ভারতের অংশ নয়? বহু রাজ্য রয়েছে, তাঁরা নিজেদের রাজ্যের ভাষাতেই কথা বলেন। এর অর্থ এই নয় যে, আপনারা অত্যাচার করবেন।‘
একই সঙ্গে মমতা উল্লেখ করেন, ভিন রাজ্যের অন্তত দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ দোকানদার, কেউ কর্মী, কেউ মজদূর। তাঁরা নিজেদের ভাষায় কথা বললেও, বাংলার সরকার, কোনওদিন, কোনও পরিস্থিতিতে তাঁদের উপর অত্যাচার করার কথা ভাবেই না। মমতা মনে করিয়ে দেন, ২২ লক্ষের বদলে কোটির বেশি মানুষ। অথচ বাংলা যে সৌহার্দ্য দেখাচ্ছে, বাঙালি পরিযায়ীদের উপর সঠিক তথ্য, পরিচয়পত্র থাকার পরেও কেন তা দেখাতে পারছে না কেন্দ্র। পরিস্থিতি এরকম থাকলে তৃণমূল কংগ্রেস সে ছেড়ে দেবে না, তাও বুঝিয়ে দেন। বলেন, ‘আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। ‘ একই সঙ্গে বলেন, এবার তিনি তিনি আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলবেন-‘আমি আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখো।‘
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলায় আমার সমস্যা করলে আমি গোটা ভারতে ঘুরব। আমাকে আপনারা আটকে রাখতে পারবেন না। আমি দেখব কতগুলি ডিটেনশন ক্যাম্পে আমাকে নিয়ে যেতে পারেন। সেখানে গিয়েও আমি বাংলাতেই কথা বলব। বাংলার লোকেদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখলে বাংলার মানুষও বিজেপিকে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখবে।‘ পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রয়োজনে ফিরে আসার কথাও বলেন তিনি।
এনআরসির নামে নোটিফিকেশন, বিনা বিচারে আটক নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতে নোটিফিকেশন জারি হয়েছে এনআরসির নামে। সেখানে বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে জেলে গিয়ে রেখে দেওয়া হবে এক বছর। মমতা প্রশ্ন বিনা বিচারে আটক নিয়ে। এদিন তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোর দ্যান ইমারজেন্সি। বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীকে গালাগালি দিয়ে সুপার ইমারজেন্সি ডে পালন করলেন, আপনারা কি করছেন? এটা মোর দেন এমারজেন্সি। এ তো জরুরি অবস্থার থেকেও বেশি কিছু। অবৈধ ভাবে আইন করেছে, যে আইনের মানে বোঝে না। ‘
ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময় সকলকে সতর্ক থাকতে বলেন। বলেন, প্রয়োজনে একদিন ছুটি নিয়ে,নাম উঠছে কি না দেখতে। অন্য রাজ্যে বসে এ রাজ্যের ভোটার তালিকার নাম কাটা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। উঠে আসে সিঙাড়া-জিলিপি প্রসঙ্গও। দলনেত্রী বলেন, ‘কে কী খাবে, কে কোথায় থাকবে, কে কী পরবে, কে কোন ভাষায় কথা বলবে? কে সিঙড়ারা খাবে, কে সমোসা? তোমার কী? প্রত্যেকে তার নিজের শরীর বোঝে। কে জিলিপি খাবে, পোহা খাবে, ধোসা খাবে, ইডলি খাবে। ঠেকুয়া খাবে, ছানার রসগোল্লা খাবে, অমৃত্তি খাবে, সেটা তাদের ঠিক করতে দাও ।‘
কেন্দ্রের পাশাপাশি এদিন স্থানীয় নেতাদের নাম না করে বিঁধেন মমতা। বলেন, বড় নেতাদের থেকে বেশি ছোট নেতারা। ইডি-সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য, উপরের নেতাদের সন্তুষ্ট করতে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিশানা করেন বামেদেরও। মমতার নিশানায় সিপিএম। বলেন, ‘শূন্য হয়ে গিয়ে মহাশূন্যে। এখন রাম-বাম জোট বেঁধেছে। অত্যাচার করে ভোটার লিস্টে নাম বাদ দিয়ে স্বপ্ন দেখছে কেশপুরে হত্যা করবে আবার, গড়বেতায় হত্যা করবে, ছোট আঙ্গাড়িয়ায় হত্যা করবে, কৃষকদের উপর গুলি চালাবে।‘