• ৩০ হাজারেই অস্ত্রের জাল লাইসেন্স! চক্রের মাথার সন্ধানে মরিয়া পুলিশ
    প্রতিদিন | ১৬ জুলাই ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: ৩০ হাজার টাকায় বন্দুকের জাল লাইসেন্স। আর বন্দুক ও কার্তুজ-সহ জাল লাইসেন্সের প‌্যাকেজ মিলেছে ৫০ হাজার টাকায়। এই প‌্যাকেজেই জাল লাইসেন্সে অস্ত্র সংগ্রহ করছে নিরাপত্তারক্ষীরা। আর তাদের এই প‌্যাকেজ দেওয়ার পিছনে রয়েছে দালালচক্র। এবার কলকাতা ও তার আশপাশের জেলা থেকে দালালচক্রের পাঁচজনের হদিশ পেল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এমনকী, বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি হওয়া লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণও করেছে এই দালালরা। আর এই জাল লাইসেন্স নিয়ে কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ডিউটি করছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

    পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, একটি নামী জুয়েলারি সংস্থা অভিযোগ জানিয়েছিল যে, সোনার গয়নার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী তথা গানম‌্যানদের লাইসেন্সই জাল। এই ব‌্যাপারে আটজন গানম‌্যান বা নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের আর্মস অ‌্যাক্ট বিভাগের এক আধিকারিক। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। প্রথম ধাপে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার আরও এক অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী উত্তম চক্রবর্তীকে উত্তর ২৪ পরগনার মধ‌্যমগ্রাম থেকে এসটিএফের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। এখনও পর্যন্ত একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ১৪টি বন্দুক ও ৬৬টি কার্তুজ উদ্ধার করে এসটিএফ। ওই নিরাপত্তারক্ষীরা সাধারণত ওই নামী জুয়েলারি সংস্থার কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার শাখায় কর্মরত ছিল। ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, শুধু এই সংস্থাই নয়, এভাবে বেসরকারি ব‌্যাঙ্ক, জুয়েলারি, সোনার ঋণদাতা ও অন‌্যান‌্য গুরুত্বপূর্ণ ব‌্যাঙ্কে জাল অস্ত্রের লাইসেন্সেই বন্দুক বা রাইফেল নিয়ে ডিউটি করছে আরও অনেক নিরাপত্তারক্ষী। এবার তাদের সন্ধানও করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

    গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীরা তিনটি নিরাপত্তারক্ষী সংস্থার মাধ‌্যমে ওই জুয়েলারি সংস্থায় যোগ দিয়েছে। ধৃত নিরাপত্তারক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে দাবি করেছে যে, তারা জানতই না যে, তাদের অস্ত্রের লাইসেন্সগুলি জাল। ওই লাইসেন্সগুলিতে যে সই ও স্ট‌্যাম্পগুলি রয়েছে, সেগুলিও জাল বলে অভিযোগ পুলিশের। গত কয়েক বছর ধরেই নিরাপত্তারক্ষীরা অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন‌্য দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

    শুধু কলকাতাই নয়, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমানের দালালচক্রের সদস‌্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ওই নিরাপত্তারক্ষীদের। তাদের দু’ধরনের ‘অফার’ দেওয়া হয়। একটিতে শুধু অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ওই লাইসেন্স দেখিয়ে কলকাতার একাধিক দোকান থেকে ১২ বোরের বন্দুক সংগ্রহ করে অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীরা। আবার বন্দুক ও বুলেট-সহ অস্ত্রের লাইসেন্সের প‌্যাকেজ বিক্রি করা হয় ৫০ হাজার টাকায়। ওই প‌্যাকেজে পুরনো অথচ সচল ১২ বোরের বন্দুক ও তার সঙ্গে কার্তুজও নিরাপত্তারক্ষীদের দেয় ওই দালালচক্র। এসটিএফের গোয়েন্দারা তদন্ত করে অন্তত পাঁচজন দালালের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের শনাক্তকরণের কাজও শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)