পশ্চিমবঙ্গে পরিস্রুত পানীয় জল, বিশেষ করে আর্সেনিক, ফ্লুয়োরাইড-মুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পে আরও ১০.১০ কোটি ডলার বা প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করল এশীয় উন্নয়নব্যাঙ্ক (এডিবি)।
এডিবি আজ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করার এই প্রকল্পে উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার প্রায় ১৬.৫ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। এই সব জেলার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক, ফ্লুয়োরাইড ও অন্যান্য লবণের থেকে দূষণ মিলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত মান অনুযায়ী পানীয় জল পৌঁছনো হবে। যে ১০.১০ কোটি ডলারের ঋণ মঞ্জুর হয়েছে, তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে সব এলাকায় লবণাক্ত জল রয়েছে, সেখানে নতুন একটি জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরিতে অর্থসাহায্য করা হবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিকল্প পরিস্রুত পানীয় জলের উৎস গড়ে তোলার কাজ হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যাতে জল পরিষেবা প্রকল্প সামলাতে পারে, তা দীর্ঘমেয়াদে চালানোর জন্য জলের মিটার, মাসুলের নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে, তার জন্যও ক্ষমতায়ন করা হবে।
এডিবি-র বিশেষজ্ঞ সৌরভ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘নতুন ঋণে নলবাহিত জল সরবরাহ ব্যবস্থার গণ্ডি আরও বাড়ানো হবে। আর্সেনিক ও ফ্লুয়োরাইড মিশ্রিত দূষিত জলের উপরে নির্ভরতা কমবে। শেষ প্রান্ত পর্যন্ত জল সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষমতায়ন হবে।’’
যথেচ্ছ ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার জেরে রাজ্যে আর্সেনিক-দূষণ আগেই মাত্রা ছাড়িয়েছিল। তার সঙ্গে ফ্লুয়োরাইডের দূষণও যোগ হয়। রাজ্যের পরিবেশ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স থেকে শুরু করে গাঙ্গেয় বঙ্গের হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বর্ধমানে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লুয়োরাইড ছড়িয়েছে। ফ্লুয়োরাইড অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে ঢুকলে হাড়, দাঁত, কিডনি, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তঃসত্ত্বাদের শরীরে ফ্লুয়োরাইড ঢুকলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়।
২০১৮-তে প্রথম এডিবি পশ্চিমবঙ্গে ২৪ কোটি ডলার লগ্নি করে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প মঞ্জুর করেছিল। এর মধ্যে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার পরিবারে মিটার-সহ জলের সংযোগ, জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সিস্টেম)-এর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা ছিল। এডিবি-র বক্তব্য, ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে। চারটি জল পরিশোধন প্রকল্প, ৭৯টি জলাধার ও প্রায় ৬,২০০ কিলোমিটার জলের নল বসানো হয়েছে।