• ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপ! শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে শুরু  ক্যানসার সার্জারি...
    আজকাল | ১৬ জুলাই ২০২৫
  •  

    মিল্টন সেন, হুগলি,১৫ জুলাই: শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালে শুরু হল ক্যান্সার সার্জারি। তিল তিল করে এগিয়ে চলেছে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল। ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলে অন্তর্বর্তী পরিকাঠামো। ২০১২ সালে পথচলা শুরু শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের। তারপর থেকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংযোজন ঘটেছে এই এই গ্রামীণ হাসপাতালে। বর্তমানে বিপুল বিস্তার হাসপাতালের। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের নয়া উদ্যোগ। 

    শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি, হাঁটু প্রতিস্থাপনসহ অর্থোপেডিক অপারেশন, লেজার সার্জারি,গাইনি, ই এন টি, জেনারেল সার্জারিসহ বিভিন্ন সার্জারি হয়। তেমনই এর পাশপাশি চোখের ফেকো সার্জারিও করা হয়। এছাড়াও আছে কম্পোনেন্ট সেরারেটরসহ নিজস্ব ব্লাডব্যাঙ্ক। বত্রিশ স্লাইস সি টি স্ক্যান মেশিন, কালার ডপলার, সিআর্ম প্রভৃতি উন্নত যন্ত্রপাতি। এবার এই গ্রামীণ হাসপাতালের সাফল্য এলো মুখমন্ডলের ক্যান্সার সার্জারিতেও। 

    খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি বাটা নগরের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর সুকুমার রায়ের জিহ্বার ক্যান্সার সার্জারি করা হল গত ২ জুলাই। জানা গিয়েছে বিগত মাস ছয়েক ধরেই সুকুমারবাবু ভুগছিলেন জিভে ঘায়ের সমস্যায়। ইএনটি চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োপসি করে পাওয়া যায় ক্যান্সারের লক্ষ্মণ। সুকুমার বাবু দারস্থ হন শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে। ডাক্তার জন্মেন্জয় চৌধুরী ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রে শুরু করেন নিজের চিকিৎসা। অঙ্কোলজিস্ট ডাক্তার শ্যামসুন্দর অধিকারী ও অঙ্কো সার্জেন ডাক্তার কামাক্ষা প্রসাদ দলুইয়ের ত্বত্তাবধানে শুরু হয় সুকুমার বাবুর চিকিৎসা। যাবতীয় পরীক্ষা নীরিক্ষার পরে ৩০ জুন সুকুমার বাবু ভর্তি হন শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে। ২ জুন সফল অপারেশন হয়। 

    ডাক্তার কামাক্ষা প্রাসাদ দলুই বলেন, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে অপারেশন করতে হয়েছে। মুখমণ্ডলে অনেক সংবেদনশীল নার্ভ থাকে। সেগুলি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাতে যথাযথ নজর রাখতে হয়। প্রয়োজনে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।  আমরা অপারেশন করে জিভের চার সেন্টিমিটার মতো বাদ দিয়ে দিয়েছি। আশা করা যায় রুগী সুস্থ হয়ে উঠবেন। ডাক্তার শ্যামসুন্দর অধিকারী বলেন, পোস্ট অপারেভিভ কেয়ার খুব জরুরি। এ সময় রুগী মুখে খাবার খেতে পারেন না। নাক দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে খাওয়াতে হয়। 

    সুকুমার বাবুর স্ত্রী মালা রায় বলেন, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের পরিষেবা আমরা খুব ভাল পেয়েছি। আমার স্বামী ভাল আছেন। আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু এখানে সবাই আপন করে নিয়েছেন। 

    শ্রমজীবী হাসপাতালের সম্পাদক চিকিৎসক অনিল সাহা বলেন, আমাদের হাসপাতালে এতদিন শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যান্সার সার্জারি হলেও মুখমন্ডলের ক্যান্সার সার্জারি এই প্রথম হল। হাসপাতালের সহসম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, মানুষের শ্রমে ঘামে আবেগে গড়ে হাসপাতালে চিকিৎসার আরও অনেক দিগন্ত খুলে দেওয়ার চেষ্টা  আমরা সর্বদা করছি। মানুষ সঙ্গে থাকলে সব সম্ভব হবে।

    প্রসঙ্গত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে হাসপাতালে শুরু হয় লেজার সার্জারি৷ ১৯৯৮ সাল থেকে শ্রমজীবী হাসপাতালে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে পেটে তিনটি মাত্র ছিদ্র করে গলব্লাডার, অ্যাপেনডিসাইটিস ও হার্নিয়ার মতো জটিল চিকিৎসা বিনা রক্তপাতেই করা সম্ভব হয়। সি-আর্ম যন্ত্রের সাহায্যে অর্থোপেডিক চিকিৎসাও দক্ষতার সঙ্গে করা হয়। এই প্রসঙ্গে শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ-সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, গ্রামীণ মানুষের কাছে উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেছেন, ''উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসা শ্রমজীবী মানুষের জন্য জরুরি। এর ফলে একদিকে যেমন হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় কমবে, এর পাশাপাশি কর্মদিবস কম নষ্ট হওয়ায় মানুষ দ্রুত রোজগারে ফিরতে পারবেন।
  • Link to this news (আজকাল)