• ছিলেন আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনে, সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধেই ছাত্রকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, চন্দননগরে ছিঃ-ছিঃ রব...
    আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি: চন্দননগরের নামী স্কুলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল। প্রধান শিক্ষক এক ছাত্রকে দিয়ে আপত্তিকর কাজ করান বলে শোরগোল পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, ওই ছাত্রকে ঘটনা বাড়িতে না বলার জন্যও ভয় দেখান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আর জি কর কান্ডে রীতিমতো রাস্তায় নেমে আন্দোলনকারী শিক্ষকের এই ন্যাক্কারজনক কীর্তিতে হতবাক অভিবাবক মহল। চন্দননগর থানায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত ছাত্রের পরিবার।

    ঘটনাটি ঘটেছে চন্দননগর পুরনিগম পরিচালিত কানাইলাল বিদ্যামন্দির স্কুলে সোমবার সকালে। জানা গিয়েছে, স্কুল শুরু পর শ্রেণি কক্ষের মধ্যেই ক্লাস ওয়ানের দুই ছাত্র মারামারি করে। ক্লাস টিচার দিদিমনি দু'জনকে প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়ে যান।

    অভিযোগ এরপরই প্রধান শিক্ষক ওই দু'জনের মধ্যে এক ছাত্রকে দিয়ে আপত্তিকর কাজ করান। যৌন নির্যাতন করেন। তারপর ভয় দেখান বাড়িতে কাউকে না বলতে। ছাত্রটির মা তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলে আসেন। ছুটির পর বাড়ি যাওয়ার পথে ছাত্রটি তার মাকে ঘটনার কথা জানায়। এরপরই বিষয়টি অন্যান্য অভিভাবকরা জানতে পারেন। বিকেলের পর চন্দননগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রের পরিবার।

    আরও পড়ুন- হিন্দুস্থান মোটর্সের খালি জমিতে এবার নয়া প্রকল্প, কী তৈরি হতে চলেছে জানেন?...

    দুপুরের পর অভিভাবকদের বিক্ষোভ শুরু হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। কানাইলাল স্কুলে পুলিশ পৌঁছায়। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয় শিক্ষককে। মঙ্গলবার তাঁকে চন্দননগর আদালতে পেশ করা হবে। 

    চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, কানাইলাল স্কুলে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। একজনই প্রধান শিক্ষক আছেন স্কুলে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাত্রদের সঙ্গে অশালীন আচরণের। ঘটনা যদি সত্যি হয় পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক। কানাইলাল স্কুল চন্দননগর শহরের অন্যতম একটি নামজাগা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে এই ধরনের ঘটনা অভিপ্রেত নয়।

    ডেপুটি মেয়র অমিত আগরওয়াল জানিয়েছেন, এটা অনভিপ্রেত একটা ঘটনা। আর যাই হোক ওই শিক্ষকের থেকে এমনটা আসা করা যায় না। কারণ আর জি কর ঘটনার শুরু থেকেই এই শিক্ষক ছিলেন আন্দোলনের নেতৃত্বে। তাঁর নেতৃত্ত্বে অবস্থান মিছিল ধরনা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হয়েছে চন্দননগর শহরে। দিন রাত চলেছে আন্দোলন। সাধারণ মানুষ তথা চন্দননগর বাসীর কাছে তিনি নিজেকে প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। এই আচরণ তাঁর থেকে কখনোই আসা করা যায় না। যায় হোক আইন আইনের রাস্তায় চলবে।

    প্রধান শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেননি। অভিভাবকদের দাবি, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই।

    এদিকে স্কুলের মধ্যে এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে দিন কয়েক আগেই উত্তাল হয়েছিল জলপাইগুড়ির এক স্বনামধন্য বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। অভিযোগ উঠেছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। আর সেই কারণেই প্রিন্সিপালের পদত্যাগ দাবি করে সরব হন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, ছাত্রীরা।

    অভিযোগ, ক্লাসরুমে এক ছাত্র তার সহপাঠিনীকে কুরুচিকর মন্তব্য করে এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করে। ছাত্রীর বক্তব্য, সে প্রতিবাদ জানালে ওই ছাত্র তাকে ভয় দেখায়। ক্লাস শিক্ষককে জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শেষে ছাত্রী বাড়ি ফিরে মাকে সব জানান। ছাত্রীর মা ইমেলের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং পরে সরাসরি প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করেন। অভিযোগ শুনেও প্রিন্সিপাল তা গুরুত্ব না দিয়ে উলটে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে বলেন এবং হুমকিও দেন। এরপর স্কুলে গেলে ছাত্রীকে আরও অপমান সহ্য করতে হয়।

    ঘটনার পর ছাত্রী ও তাঁর পরিবার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এবং পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে পৌঁছেছে। কমিটির নির্দেশে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক এবং সমাজকল্যাণ দফতরের প্রতিনিধিরা স্কুলে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে ১০ জুলাই দুপুরে হাজিরা দিতে বলেছিল। 
  • Link to this news (আজকাল)