• কৃষ্ণনগরের ৯ শ্রমিককে ‘অপহরণ’ করেছে ছত্তীসগঢ় সরকার! অভিযোগ তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার
    আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • এ বার বিজেপি পরিচালিত ছত্তীসগঢ় সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের মিথ্যা মামলায় জেলবন্দি করে রাখার অভিযোগ! আর এ নিয়ে অভিযোগ করলেন স্বয়ং নদিয়ার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সোমবার সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োবার্তায় তিনি বলেন, ছত্তীসগঢ়ে সরকার এবং পুলিশ পরিচালিত অপহরণ চলছে। মহুয়ার অভিযোগ, তাঁর লোকসভা এলাকার ন’জন শ্রমিককে কর্মক্ষেত্র থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে বিষ্ণু দেও সাঁইয়ের পুলিশ। ওই নয় শ্রমিকের পরিবার উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তাদের কিংবা রাজ্য সরকারকে এ নিয়ে কিছুই জানায়নি ছত্তীসগঢ় সরকার।

    বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দলগত ভাবে প্রতিবাদ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল। পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁদের হেনস্থা নিয়ে মঙ্গলবারই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মমতা। সূত্রের খবর, সেখানে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলায় ভিন্‌রাজ্যের প্রায় দেড় কোটি মানুষ বসবাস করছেন। এখানেই তাঁদের রুজিরুটি। তাঁদের কখনও হেনস্থা হতে হয় না। কিন্তু বাংলার ২২ লক্ষ মানুষ ভিন্‌রাজ্যে কেন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন? এই প্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ছত্তীসগড় সরকার পরিচালিত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বস্তারে।’’ এর পর মহুয়া জানান,গত বেশ কিছু দিন আগে কৃষ্ণনগরের ন’জন রাজমিস্ত্রি ছত্তীসগঢ়ের বস্তারের আলবেরাপাড়ায় একটি বেসরকারি স্কুলের নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন। গত রবিবার পুলিশ গিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে। মহুয়ার দাবি, বাংলার ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রত্যেকের কাছে বৈধ নথিপত্র রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁদের জেল পুরে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, পরিবারের সঙ্গে কাউকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানার পরে ছত্তীসগঢ়ের এক আইপিএস অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলে মহুয়া অবাক হয়ে গিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন,‘‘ন’জনকে বস্তারের পাশের জেলা জগদ্দলপুরের জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ১২৮বি (পরিচয় গোপন করে অপারধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ) সরকার বা ধৃতদের পরিবার, কাউকেই এ বিষয়ে ছত্তীসগঢ় পুলিশ কিছুই জানায়নি।’’

    কৃষ্ণনগরের সাংসদ জানান, এ নিয়ে ছত্তীসগঢ়ের এক পুলিশ সুপারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। কিন্তু ওই আইপিএস অফিসারের বক্তব্য তাঁকে অবাক করেছে। মহুয়া বলেন, ‘‘উনি জানালেন, বাংলার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে আদিবাসী মহিলাদের ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে! সেই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’’ তবে মহুয়ার অভিযোগ, ভুয়ো অভিযোগ করেই বাংলার নয় শ্রমিককে জেলবন্দি করে রেখেছে ছত্তীসগঢ় পুলিশ। এই ঘটনাকে তিনি সরকারি অপহরণ বলে বর্ণনা করেন।

    উল্লেখ্য, বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও বাংলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন্‌রাজ্যে আটক করে রাখা হচ্ছে বলে ক্রমাগত অভিযোগ সামনে আসছে। এ নিয়ে দিল্লির জয়হিন্দ কলোনিতে সোমবার থেকে ধর্নাতেও বসেছিল বাংলার শাসকদল। মঙ্গলবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত সেখানে ধর্না দেবেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ, সুখেন্দুশেখর রায়, সাকেত গোখলেরা। দোলা জানান, ওই এলাকার কলোনির বাংলাভাষী বাসিন্দারাও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আগামী বুধবার, ১৬ জুলাই কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)