থমকে যেতে পারে সভ্যতার অগ্রগতি, অবলুপ্তির পথে পুরুষ, দাবি গবেষকদের! কিন্তু কেন? কোন পথে ভবিষ্যৎ?...
আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
গোপাল সাহা
কথিত আছে 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে কেহ নয়'। কিন্তু মানব সভ্যতায় পুরুষ প্রজাতি যদি অবলুপ্তির পথে যেতে থাকে তাহলে তো সভ্যতাই ধ্বংস হয়ে যাবে! সমাজ দু’টি ভাগে বিভক্ত, নারী এবং পুরুষ। আর সেখানে পুরুষ প্রজাতিটিই যদি বিলুপ্তের পথে যেতে থাকে তাহলে সমাজের ভারসাম্যই তো হারিয়ে যাবে। থমকে যাবে মানব সভ্যতার অগ্রগতি! চিন্তায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা ও গবেষকরা।
নারীর দেহে এক জোড়া লিঙ্গ ক্রোমোজোম (যা একজন ব্যক্তির লিঙ্গ নির্ধারণ করে) XX এবং পুরুষ দেহে একজোড়া লিঙ্গ ক্রোমোজোম XY। মোট ২৩ জোড়া এবং তার মধ্যে ২২ জোড়া উভয় লিঙ্গে একই রকম এবং সেগুলোকে অটোজোম বলা হয়। কিন্তু ২৩তম জোড়ার ক্রোমোজোম নারী ও পুরুষ সদস্যে ভিন্ন। স্ত্রী মাত্র এক ধরনের ডিম্বাণু (X) উৎপন্ন করে। কিন্তু পুরুষ দু’রকমের শুক্রাণু (X এবং Y) উৎপন্ন করে।
Y ক্রোমোজোম প্রাথমিকভাবে পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। Y ক্রোমোজোম বিবর্তনের সময় উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মধ্য দিয়ে গেছে। এর ছোট আকার এবং হ্রাসপ্রাপ্ত জিনের সংখ্যা X ক্রোমোজোমের তুলনায় সামগ্রিক জৈবিক প্রক্রিয়ায় এর ভূমিকা সীমিত করে দিয়েছে। যেখানে 'X' ক্রোমোজোমে ১০০০টি জিন থাকে কিন্তু অন্যদিকে 'Y' ক্রোমোজোমে বর্তমানে অবক্ষয়ের কারণে সময়ের সাথে সাথে মাত্র ৫০-১০০টি জিন অবশিষ্ট রয়েছে। যা আগামীতে অবলুপ্তির পথে, এমনটাই বলছেন গবেষকরা! এই বিষয়ে একাধিক পরীক্ষা হয়েছে যার ফল আশানুরূপ নয়। অপরদিকে, আবার বেশ কিছু গবেষক বলছেন, Y ক্রোমোজোমের অবলুপ্তি নয়, এরা নিজের রূপ পরিবর্তন করে অন্য কোন রূপে অবস্থান করছে। তাই অনেকে ভাবছেন Y ক্রোমোজোমের অবলুপ্তি ঘটছে ক্রমাগত।
সিংহভাগ গবেষকই Y ক্রোমোজোমের ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের মতে বেশ কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য বর্তমানে পুরুষ ও নারীর ভারসাম্যে অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, ওয়াই ক্রোমোজোমের ঘাটতি আগামীতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার নেপথ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ, যেমন একই বর্ণে বিবাহ বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং অধিক পরিমাণে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে নারী অথবা পুরুষের সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া।
Y ক্রোমোজোমের অবক্ষয় কি বিরল জন্মগত রোগের জন্য দায়ী?
যদিও Y ক্রোমোজোম অন্যান্য ক্রোমোজোমের তুলনায় বিবর্তনের সময়ে দ্রুত অবক্ষয়ের জন্য পরিচিত। এটি সাধারণত বিরল জন্মগত রোগগুলোর সরাসরি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। যেভাবে অন্যান্য ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট জিনে মিউটেশন বা বড় ধরনের গঠনতান্ত্রিক সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে গবেষকদের ব্যাখ্যা
* 'Y' ক্রোমোজোমের অবক্ষয় ও জিনের ক্ষতি:
Y ক্রোমোজোম বহু মিলিয়ন বছর ধরে এর মূল জিনের অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে, যা একটি সুপরিচিত বিবর্তনগত প্রক্রিয়া। কিন্তু এখনও যেসব জিন Y ক্রোমোজোমে রয়ে গেছে, সেগুলো মূলত পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণ (যেমন SRY জিন) এবং প্রজনন ক্ষমতার (স্পার্ম উৎপাদন) সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু Y ক্রোমোজোমের জিনের ক্ষতির ফলে AZF (Azoospermia Factor) অঞ্চলের মতো নির্দিষ্ট অঞ্চলে, যা শুক্রাণু কোষের বিকাশের সাথে জড়িত, মুছে ফেলার কারণে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* জন্মগত রোগ (Congenital Diseases):
জন্মগত রোগ বলতে সেইসব গঠনগত বা কার্যক্ষমতার অস্বাভাবিকতাকে বোঝানো হয়, যা গর্ভকালীন সময়ে ঘটে এবং জন্মের সময় বা জন্মের পর শিশু অবস্থায় ধরা পড়ে। এদের অনেকটাই বংশগত কারণে হয়ে থাকে। তবে এগুলি সাধারণত অটোসোমাল (অ-লিঙ্গ ক্রোমোজোম) জিনের মিউটেশন বা X ক্রোমোজোম বা অন্যান্য ক্রোমোজোমের গঠনগত বা সংখ্যাগত ত্রুটির কারণে হয়।
* Y ক্রোমোজোমের ত্রুটি ও তার প্রভাব:
সংখ্যাগত অস্বাভাবিকতা (Numerical abnormalities):
যেমন XYY সিনড্রোম—যেখানে একজন পুরুষের অতিরিক্ত একটি Y ক্রোমোজোম থাকে। এই অবস্থায় ব্যক্তির উচ্চতা তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে শেখার সমস্যা বা আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে তারা সাধারণত সুস্থ ও প্রজননক্ষম হয়। এটিকে খুব গুরুতর জন্মগত রোগ হিসেবে দেখা হয় না, যেটি অঙ্গের গঠন বা মৌলিক কার্যক্ষমতায় সমস্যা সৃষ্টি করে।
গঠনগত ত্রুটি বা মাইক্রো-ডিলিশন (Structural abnormalities/microdeletions):
Y ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট অংশে, বিশেষ করে AZF (Azoospermia Factor) অঞ্চলে, যদি ডিলিশন (অংশ হারিয়ে যায়) হয়, তবে এটি পুরুষের বন্ধ্যাত্বের একটি সাধারণ কারণ। যদিও বন্ধ্যাত্ব একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, এটি জন্মের সময় থেকেই অঙ্গপ্রতঙ্গের ত্রুটি হিসেবে দেখা যায় না—তাই একে সাধারণত জন্মগত রোগ হিসেবে ধরা হয় না।
MLOY (Mosaic Loss of Y chromosome):
এটি একটি অর্জিত (acquired) অবস্থা, যেখানে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কোষ Y ক্রোমোজোম হারিয়ে ফেলে। এটি ক্যানসার বা অ্যালঝাইমার্সের মতো বার্ধক্যজনিত রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, জন্মগত রোগের সঙ্গে নয়।
Y ক্রোমোজোমের অবক্ষয় ও এতে পরিবর্তনের কারণে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন Y ক্রোমোজোম ইনফার্টিলিটি বা XYY সিনড্রোম) দেখা দিতে পারে। তবে এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত পুরুষের লিঙ্গ বিকাশ ও প্রজনন ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। তাই, Y ক্রোমোজোমের অবক্ষয়কে সাধারণভাবে সেই সব ‘বিরল জন্মগত রোগের’ জন্য দায়ী করা হয় না, যেগুলো জন্ম থেকেই গুরুতর অঙ্গগত ত্রুটি বা কার্যক্ষমতা হ্রাস ঘটায়।
সম্প্রতি 'Nature Reviews Genetics' জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, গবেষকরা Y ক্রোমোজোম হারানো সংক্রান্ত বর্তমান গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এর প্রভাব বিভিন্ন রোগ ও মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর কেমন পড়ে, তা ব্যাখ্যা করেছেন। বলা হয়েছে, LOY অর্থাৎ ওয়াই ক্রোমোজোমের ঘাটতি একটি গতিশীল রূপান্তর (dynamic mutation), যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে এবং এটি একটি সম্ভাব্য বায়োমেকার (biomarker) ও চিকিৎসার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
LOY কী এবং এর আবিষ্কার:
মানব পুরুষ কোষে Y ক্রোমোজোম হারানোর ঘটনা (LOY অর্থাৎ ওয়াই ক্রোমোজোমের ঘাটতি) প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রায় ৬০ বছর আগে। তবে এটি বিজ্ঞানীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই। প্রাথমিকভাবে মনে করা হতো যে Y ক্রোমোজোম শুধুমাত্র যৌন পরিচয় এবং শুক্রাণু উৎপাদনের জন্যই দায়ী। কিন্তু এখন এটি প্রমাণিত হয়েছে যে LOY একটি সাধারণ সোমাটিক মিউটেশন (শরীরের কোষে হওয়া রূপান্তর), যার প্রভাব বহুবিধ।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোষ বিভাজনের সময় ভুলের কারণে Y ক্রোমোজোম ছোট মাইক্রোনিউক্লি (micronuclei)-তে আটকে পড়ে এবং পরে তা ভেঙে যায়, ফলে Y ক্রোমোজোম হারিয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে গবেষণায় উঠে এসেছে যে LOY মৃত্যুঝুঁকি, ক্যান্সার এবং আলঝেইমার রোগের মতো অবস্থার সঙ্গে জড়িত। পরিবেশগত কারণ, বিশেষ করে ধূমপান, এর ঘটনার হার বাড়াতে সহায়ক। LOY সবসময় মোজাইক প্রকৃতির হয় (অর্থাৎ শরীরের কিছু কোষে এটি থাকে, কিছু কোষে থাকে না) এবং এটি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় না।
Y ক্রোমোজোমের সাম্প্রতিক উন্নত সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে LOY নিয়ে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং এটির স্বাস্থ্য ও রোগের সঙ্গে সম্পর্ক আরও পরিষ্কার হয়েছে। গবেষকরা এটিকে এখন জেনেটিক অস্থিরতা এবং পরিবেশগত চাপের জৈবিক সূচক হিসেবে দেখছেন। গবেষণায় ১৫৬টি জিনগত লোকাস শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলো LOY-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, বিশেষ করে যেগুলো DNA মেরামত এবং কোষ চক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
LOY সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রক্তের কোষে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এটি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তবে মুখের কোষ বা ধমনীতে জমে থাকা চর্বির মধ্যে LOY-এর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম।
LOY (loss of 'Y' chromosome) -এর ফলে Y ক্রোমোজোমের জিনগুলোর মুছে যাওয়া ঘটে, যা শ্বেত রক্তকণিকার (leukocyte) রোগপ্রতিরোধ কাজকে ব্যাহত করে। এটি জিনের হাইপোমিথাইলেশন (gene hypomethylation)-এর সঙ্গে যুক্ত, বিশেষ করে যখন শ্বেত কণিকা বিভিন্ন ধাপে পরিপক্ক হয়। LOY-এ ইমিউন চেকপয়েন্ট রিসেপ্টর, যেমন PD1 ও LAG3-এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়, যার ফলে অ্যান্টি-টিউমার প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। LOY-এর প্রভাব প্লেটলেট ও লাল রক্তকণিকার সংখ্যার ওপরও পড়ে, যা COVID-19 আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের মধ্যে থ্রম্বোসিস (রক্ত জমাট বাঁধা)-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। LOY একটি গতিশীল অবস্থা, অর্থাৎ কিছু কোষে এটি দেখা যায়, আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেও যেতে পারে। কিছু গবেষণায় LOY-এর সঙ্গে যৌন হরমোন, যেমন টেস্টোস্টেরন ও SHBG (sex hormone-binding globulin)-এর মাত্রা পরিবর্তনের সম্পর্কও উঠে এসেছে।
প্রভাবিত কোষগুলি কখনও কখনও পজিটিভ সিলেকশনের মধ্য দিয়ে যায়, যা একটি প্রতিরোধ দমনকারী পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে এবং এটি টিউমার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে। এই ধরনের নির্বাচনী সুবিধা মনোসাইট, টি-সেল এবং ন্যাচারাল কিলার সেলগুলিতে দেখা গিয়েছেষ তবে বিভিন্ন কোষে ইমিউন রেগুলেশনের উপর এর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিছু কোষে, LOY (Loss of Y chromosome) টিউমারে ইমিউন প্রতিক্রিয়া দুর্বল করতে পারে, যদিও মনোসাইটে এর প্রভাব আলাদা। নিঃসন্দেহে Y ক্রোমোজোমের অবক্ষয় (degeneration) পুরুষদের বন্ধ্যত্বের একটি কারণ হতে পারে, তবে এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্তান জন্ম নিয়ে সমস্যার একমাত্র বা প্রধান কারণ নয়। আর এটিই আইভিএফ (IVF) বা কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ—এমন বলা সঠিক নয়। IVF ব্যবহারের হার বৃদ্ধির পেছনে বহু জটিল কারণ জড়িত, যেমন দেরিতে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত, জীবনযাপন পদ্ধতি, এবং বন্ধ্যত্ব সংক্রান্ত সচেতনতার বৃদ্ধি। নীচে এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হল-
১) Y ক্রোমোজোম ও বন্ধ্যত্ব: Y ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে AZF (Azoospermia Factor) অঞ্চলে, জেনেটিক ডিলিশন বা অপূর্ণতা থাকলে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং এতে পুরুষের বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে।
২) একমাত্র কারণ নয়: Y ক্রোমোজোমের এই ধরনের জেনেটিক সমস্যাগুলি বন্ধ্যত্বের একটি কারণ হলেও এটি একমাত্র বা প্রধান কারণ নয়। পুরুষদের বন্ধ্যত্বের পিছনে আরও অনেক কারণ থাকে— যেমন হরমোনের অসাম্য, ভ্যারিকোসিল (varicocele), সংক্রমণ, অথবা জীবনধারাজনিত কারণ।
৩) IVF প্রবণতার প্রধান কারণ নয়: যদিও Y ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে কখনও কখনও আইভিএফ-এর বিশেষ পদ্ধতি যেমন ICSI (Intracytoplasmic Sperm Injection) প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু IVF ব্যবহারের বাড়তি প্রবণতা একমাত্র Y ক্রোমোজোম অবক্ষয়ের কারণে নয়।
আরও পড়ুন: ত্রাতা সেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ, হেমোরেজিক সিভিএ-র চিকিৎসায় প্রাণ ফিরল তিন ব্যক্তির!
এই বিষয় নিয়ে আজকাল ডট ইন-এর মুখোমুখি হয়ে প্রখ্যাত চিকিৎসক অরুণ কুমার সিং বলেন, "মানব সভ্যতায় বর্তমানে নারী বা পুরুষের বহুমুখী সম্পর্ক ওয়াই ক্রোমোজোমের বিনাশ বা ঘাটতি একটা বড় কারণ। বর্তমান সমাজের যুবক যুবতীদের মধ্যে যদি সম্পর্কের মনোগামী থাকে তাহলে ওয়াই ক্রোমোজোম সুস্থ থাকে এবং তার বিস্তার লাভ করে। আর পলিগামী হলে অর্থাৎ একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে পরবর্তী সন্তানের মধ্যে ওয়াই ক্রোমোজোমের নানাবিধ সমস্যা বা অবলুপ্তি ঘটে থাকে।"
তিনি আরও বলেন, "ওয়াই ক্রোমোজোম শেষ হয়ে গেলেও মানুষ শেষ হয়ে যাবে না অর্থাৎ পুরুষ প্রজাতি শেষ হয়ে যাবে না। মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের জিন মূলত বহন করে SRY জিন, যা লিঙ্গ নির্ধারণ করে পুরুষ হবে না নারী। অনেক ক্ষেত্রে এই ওয়াই ক্রোমোজোম অন্য রূপে পরিবর্তিত হয়। কাজেই যারা বলছেন যে ওয়াই ক্রোমোজোম বিলুপ্তির পথে তা কোথাও ঠিক, আবার ভুলও বলা যেতে পারে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ওয়াই ক্রোমোজোম অন্যরূপ ধারণ করেছে। কিন্তু হারিয়ে যায়নি।"
এই বিষয় নিয়ে প্রখ্যাত চিকিৎসক তিস্তা ব্যানার্জি বলেন, "ওয়াই ক্রোমোজোমের বহু বছর ধরে বৈজ্ঞানিক মহলে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে | পুরুষের জিনগত গঠন নির্ধারণ করে এই sex chromosome, বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর গঠনের জিনগুলিতে এসেছে পরিবর্তন এবং এর ফলে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগের উপসর্গ। বিভিন্ন গবেষণার দ্বারা কিছু কিছু কার্ডিয়াক সমস্যা, অ্যালঝাইমারের মত স্নায়ু বা মস্তিষ্কের সমস্যা। যার পিছনে Y ক্রোমোজোমের এই ভাঙা গড়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।"