হিন্দুস্থান মোটর্সের খালি জমিতে এবার নয়া প্রকল্প, কী তৈরি হতে চলেছে জানেন?...
আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
মিল্টন সেন: শিল্পে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। হুগলির হিন্দমোটরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা হিন্দুস্থান মোটর কারখানার খালি জমি এখন কাজে লাগছে নতুন রেল কোচ তৈরির প্রকল্পে। টিটাগড় ওয়াগনস সম্প্রসারণের পথে এক বড় ধাপ এগোল। ওই জমিতেই গড়ে উঠছে মেট্রো রেল ও ইএমইউ এসি কোচ তৈরির আধুনিক ইউনিট। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্থান মোটরের কারখানা। অ্যাম্বাসাডর গাড়ির উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে কারখানার বিশাল এলাকা পড়ে ছিল পরিত্যক্ত অবস্থায়। তবে ঠিক তার পাশেই থাকা টিটাগড় ওয়াগন কারখানায় রেল কোচ তৈরির কাজ চলছিল পুরোদমে।
সম্প্রতি মেট্রো রেল ও ইএমইউ এসি কোচ তৈরির বড় বরাত পায় টিটাগড় ওয়াগনস। কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি জমির প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই প্রেক্ষিতেই ২০২২ সালে হিন্দুস্থান মোটরের সম্পত্তি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানার সম্প্রসারণে ৪০ একর জমি লিজে দেওয়া হয়েছে টিটাগড় ওয়াগনস-কে।ব সোমবার ওই জমি আনুষ্ঠানিকভাবে দখলে নেয় সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকেই কারখানার মূল গেট ও চত্বরে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন ছিল। উপস্থিত ছিলেন টিটাগড় ওয়াগনসের কর্মীরাও।
এই বিষয়ে স্থানীয় সিপিআইএম নেতা আভাস গোস্বামী বলেন, ‘শিল্পের জমিতে নতুন শিল্প গড়ে উঠুক আমরা চাই। তবে যারা আগের কারখানার পে-রোলে ছিলেন, তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে’। হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি টিটাগড় ওয়াগনস অতিরিক্ত জমির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, অতিরিক্ত জমিতে তারা নতুন ইউনিট গড়ে মেট্রো ও ইএমইউ এসি কোচ তৈরি করবে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ৪০ একর জমি লিজে দিয়েছে সংস্থাকে। লিজ বাবদ রাজ্য সরকার পাবে অর্থ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে পড়া জমি আবার শিল্পকারখানার আওতায় আসায় কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য, এই পদক্ষেপ রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং রেল সংক্রান্ত উৎপাদন ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি, রেল-মেট্রোতে সফর আরামদায়ক করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন আগেই দমদম এবং বিধাননগরে যাত্রী পরিষেবা উন্নত করতে একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাভাবিক দিনে বিধাননগর স্টেশনে দৈনিক প্রায় ১.৭ লক্ষ যাত্রী ওঠানামা করেন। যার মধ্যে সকাল ও সন্ধ্যার পিক আওয়ারে অর্থাৎ শুধুমাত্র অফিস টাইমে ১ লক্ষের বেশি যাত্রীর ভিড় হয়। একইভাবে দমদম স্টেশনের দৈনিক যাত্রীসংখ্যা গড়ে ১.৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে বর্তমানে।
এই বিপুল ভিড়ের কারণে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজছে রেল। পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বিধাননগর স্টেশনে যাত্রীদের জন্য আরও বেশি জায়গা করে দিতে এবং অতিরিক্ত ভিড়ের ফলে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা এড়াতে সমস্ত ভেন্ডার ও স্টল— এমনকি অনুমোদিত দোকানগুলিও সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রেলের দাবি, এতে স্টেশনে যাত্রীদের চলাচলের জন্য অনেকটা খোলা জায়গা তৈরি হবে।
দমদম স্টেশনের দ্বিতীয় প্রবেশপথে (আরপিএফ ব্যারাকের পাশে) একটি নতুন টিকিট বুকিং অফিস চালু করার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে যাত্রীদের টিকিট কাটার সুবিধা বাড়বে এবং স্টেশনের মূল প্রবেশপথের ভিড় কিছুটা কমবে বলেই আশাবাদী রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বিধাননগর ও দমদম স্টেশন থেকে প্রতিদিন যথাক্রমে ২১৬ ও ২২২ জোড়া শহরতলির ইএমইউ (EMU) লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এই ব্যস্ততা সামলাতে আরপিএফ এবং রেলকর্মীদের কৌশলগতভাবে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে যাত্রীদের ভিড় সামলানো যায় এবং যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব হয়।