• বৃষ্টিতে মান বেড়েছে পাটের, আগের চেয়ে বাড়তি দামও
    আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • এক দিকে যেমন সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে, অন্য দিকে খোলা বাজারে পাটের ভালই দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এ বার পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টির জল পাওয়ায় পাটের গুণগত মানও ভাল হবে বলে আশা করছেন জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-র (জেসিআই) কর্তারা। তার উপর যদি বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি বন্ধ থাকে, তা হলে এ বছর নদিয়ার পাট চাষিদের কপাল সত্যিই খুলতে পারে।

    রাজ্যের যে জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত পাট উৎপন্ন হয়, তার মধ্যে নদিয়া অন্যতম। মূলত কৃষ্ণনগর সদর ও তেহট্ট মহকুমা এলাকাতেই বেশি পাট উৎপন্ন হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করে তেমন লাভ হচ্ছে না বলে চাষিদের আক্ষেপ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে লোকসানের মুখও দেখতে হচ্ছিল তাঁদের। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। ফলে অনেকেই পাট চাষে উৎসাহ হারিয়েছেন। অনেক চাষি পাট চাষ ছেড়ে লাভজনক ভুট্টার চাষ করতে শুরু করেছেন বলে কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে এ বছর নদিয়া জেলায় প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ কমেছে বলে জেলার কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। গত বছর জেলায় যেখানে প্রায় ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল, এ বছর সেখানে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

    আবার এই বছরই চাষিরা কিছুটা হলেও পাটের দাম পেতে শুরু করেছেন। নদিয়া জেলায় গুণগত মান অনুযায়ী মূলত ৩ ও ৪ নম্বর পাট উৎপন্ন হয়। গত বছর ৩ নম্বর পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টাল প্রতি ৫৩৩৫ টাকা করে। এ বছর সেটা বাড়িয়ে ৫৬৫০ টাকা করা হয়েছে। এর বাইরে খোলা বাজারে চাষিরা ফড়েদের কাছ থেকেও বেশি দাম পাচ্ছেন। জেসিআই-এর কর্মীরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে ৩ নম্বর পাটের বাজারদর কুইন্টাল প্রতি প্রায় ৭০০০-৭৪০০ টাকা, যা বিগত বছরের তুলনায় যথেষ্টই বেশি বলে তাঁরা মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, গত বছর পাটের দাম সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ বার শুরুতেই এই টাকা মেলায় চাষিরা ভাল দাম পেতে চলেছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।

    ফলে, লোকসানের মুখ দেখতে দেখতে ক্লান্ত চাষিরা যখন পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন, তখনই পাটের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভবনা তাঁদের আবার পাট চাষে উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছেন জেসিআই কর্তারা। কর্পোরেশনের এক কর্তার কথায়, “বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পাট আনা বন্ধ আছে। ফলে ফড়েরা মনে করছে যে এ বার পাটের চাহিদা বাড়বে। সেই সঙ্গে ভাল দামও পাওয়া যাবে। সেই কারণে এ বার তারা প্রথম থেকেই ভাল দাম দিয়ে পাট কিনে নিতে চাইছে।”

    তার পাশাপাশি, এ বার পাটের গুণগত মানের জন্যও ভাল দাম পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-র বেথুয়াডহরি রিজিয়োনাল ম্যানেজার শিলাজিৎ নষ্কর বলেন, “এ বার বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত জল পাওয়া গিয়েছে। পাট পচাতে জলের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফলে পাটের গুণগত মান বাড়বে। যেখানে ৪ নম্বর মানের পাট উৎপন্ন হত, সেখানে ৩ নম্বর মানের পাট তৈরি হবে। ফলে চাষিরা এমনিতেই পাটের দাম বেশি পাবেন বলে মনে হচ্ছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)