• রুগ্‌ণ শিল্প নিয়ে মোদীর বার্তা মিলবে কি, চর্চা
    আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • আগামী ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্গাপুরে আসছেন। সেখানে সভা থেকে তিনি শিল্পাঞ্চলে বন্ধ এবং ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলি নিয়ে কোনও বার্তা দেন কি না, তাকিয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা। সাধারণ মানুষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলি মনে করছে, আসানসোল-দুর্গাপুরে শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও কর্মসংস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিশা দেখালে তাঁর দুর্গাপুর সফর মানুষের মনে দাগ কাটবে।

    একসময়ে পশ্চিম বর্ধমানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগৃহীত কারখানার সংখ্যা ছিল ১৮টি। ওয়াগান কারখানা থেকে শুরু করে অ্যালুমিনিয়াম, সাইকেল, সার, খনির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা-সহ বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদনের বারোটি সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।‌ ২০০০ থেকে ২০০৪-র মধ্যে দশটি, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বার্নপুর বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানির ওয়াগন কারখানা এবং রূপনারায়ণপুরে কেব্‌ল তৈরির কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

    দুর্গাপুরের বাসিন্দা একটি বহুজাতিক সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধান দেবাশিস দাস রবিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। তাঁর দাবি, আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বন্ধ কারখানাগুলির পুনরুজ্জীবন এবং বাকি ছ'টির মধ্যে ধুঁকতে থাকা কারখানাগুলির স্বনির্ভরতার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল অনুমোদনের কথা জনসভায় ঘোষণা করুন প্রধানমন্ত্রী। তা হলেই তাঁর দুর্গাপুর সফল শিল্পাঞ্চলবাসীর কাছে সুখের হবে।

    জেলা কংগ্রেসের সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর কথা, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর থেকে কিছু প্রত্যাশা করি না। উল্টে আমি আশঙ্কিত। কারণ, এই প্রথম নজিরবিহীন ভাবে সেলের জায়গায় অম্বানী গোষ্ঠীর (রিলায়েন্স) একটি পেট্রল পাম্প চালু হয়েছে। আগে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তৃপক্ষ কোনও বেসরকারি সংস্থাকে তাঁদের জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান অয়েলের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠী‌ যৌথ উদ্যোগে দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে সেলের জায়গা ব্যবহার করে বাড়ি বাড়ি পাইপের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করছে। এর পরে বাকি এলাকায় তা সম্প্রসারিত হবে। প্রধানমন্ত্রী আদানিদের কোনও অসুবিধা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে, নাকি আরও কিছু তাঁদেরহাতে তুলে দিতে আসছেন, তা বুঝতে পারছি না।’’

    বিএমএসের জেলার যুগ্ম-সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায় জানান, বন্ধ কারখানাগুলি চালু করা, আসানসোল-দুর্গাপুর খনি শিল্পাঞ্চলে রুগ্‌ণ কারখানাগুলির পুনরুজ্জীবন, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় (ডিএসপি) ঠিকাকর্মী নিয়োগে সক্রিয় ‘অশুভ চক্রকে’ উৎখাত করা, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো নানা দাবিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেবেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কয়লা শিল্পে ‘এমডিও’ প্রজেক্ট ও নয়া শ্রমনীতি বাতিল করুন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলিকে দিশা দেখান। ডিএসপি, এএসপি’র আধুনিকীকরণ, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানাকে ঘুরপথে বেসরকারিকরণের চক্রান্ত ব্যর্থ করুন। তাহলেই কর্মসংস্থানের দিকে চেয়ে থাকা শ্রমজীবী জেলাবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল হবে।’’

    আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের মন্তব্য, ‘‘২০১৪-র পরে অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নয়া শ্রমনীতি শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে সর্বনাশ করেছে।‌ এর পরে ওঁর কাছে শ্রমিকদের প্রত্যাশা করার মতো কিছু থাকতে পারে না।‌ এটা সর্বস্তরের মানুষের বোঝা উচিত।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)