• চোখের ভুলে খসছে কড়ি, সঙ্গী হয়রানি
    আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • রং হুবহু সরকারি বাসের মতো। নামেও রয়েছে মিল। সেই রং আর লেখা দেখেই সরকারি বাস ভেবে তাড়াহুড়োতে সাধারণ যাত্রী উঠে পড়ছেন বেসরকারি বাসে। বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পরে কন্ডাক্টর বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় ভাঙছে ভুল। তখন আর করার কিছুই থাকছে না। সরকারি বাস থামে নির্দিষ্ট স্টপেজে। কিন্তু এই বাসগুলি থামছে যেখানে সেখানে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে অনেক বেশি। বিষয়টি ‘লোক ঠকানো’ বলেই মনে করছেন যাত্রীরা। ঘটনা নজরে এসেছে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার। যাত্রীরাও নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।

    দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসের গায়ে লেখা থাকে ‘এসবিএসটিসি'। তেমনই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসে লেখা থাকে এনবিএসটিসি। কিন্তু এই বেসরকারি বাসগুলির কোনওটিতে লেখা থাকছে ‘এসবিএটিসি', কোনওটিতে আবার 'এনবিএআরকি'। নামের মিল থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। তাঁদের দাবি, এই বিভ্রান্তিকেই পুঁজি বানাচ্ছেন কিছু পরিবহণ ব্যবসায়ী।

    বর্ধমানের বাসিন্দা সন্দীপন সরকার বলেন, ‘‘বাসের রং ও লেখা দেখে যাত্রীরা সরকারি বাস ভেবে ওই সব বেসরকারি বাসে উঠে পড়ছেন। মাঝ রাস্তায় ভাড়া মেটাতে গিয়ে পস্তাচ্ছেন। কারণ এই সব বাসে ভাড়া সরকারি বাসের থেকে অনেক বেশি। ভাড়া মেটানোর পরে বোঝা যায় এই বাস আসলে সরকারি রঙে সাজা বেসরকারি বাস।’’ দুর্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সিঞ্জু সোনকার বলেন, ‘‘নীল-সাদা রঙের এই বাসগুলির কোনওটিতে লেখা এববিএনআরটি, কোনওটিতে এসবিএটিসি। রাস্তায় বেরিয়ে তাড়াহুড়োয় ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক নয়। দুর্গাপুর থেকে ফেরার পথে আমারও এই ভুল হয়েছে কয়েক বার। উঠলেই বিপদ। ভাড়া গুণতে হবে বেশি। আবার গন্তব্যে পৌঁছতে সময়ও যাবে অনেক।’’

    এই বাসগুলি সাধারণত কলকাতা থেকে উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যায়। এক জেলা থেকে অন্য জেলার মধ্যে বাসগুলি চলাচল করে। ফলে দূরপাল্লার এই বাসে এক বার ভুল করে উঠে পড়লে হয়রানির সীমা থাকে না বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে বীরভূমের এক যাত্রী সদন ঘোষ বলেন, ‘‘বাসের রং আর গন্তব্য দেখেই আমরা উঠে পড়েছিলাম বাসে। পরে বুঝলাম এটা অন্য বাস। সময়সীমা না মেনে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বাসগুলি। শক্তিগড়ে নেমেছি। সরকারি বাস ধরে বীরভূমে ফিরব।’’ সাধারণ যাত্রীদের দাবি, এ নিয়ে সরকারের উদ্যোগে সচেতনতা প্রচার ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি।

    বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা৷ উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কিন্তু বাসের রং মালিকেরা নিজের খুশি মতো করতে পারেন। তাতে আইনত কোনও বাধা নেই। তা-ই এ ক্ষেত্রে আমাদের হাত-পা বাঁধা।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছি। আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সরকারি বাসের লোগো নির্দিষ্ট রয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ— দু’টি সংস্থার বাসেই বেশি করে লোগো লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষের বাস চিনতে সুবিধা হয়।’’ দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডলও জানান, তাঁরাও একই পদক্ষেপ করছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)