স্কুলে যৌন হেনস্থা রোধে প্রয়োজন সচেতনতা, প্রযুক্তিও
আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
বিদ্যালয় শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যেখানে সে নির্ভয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আজকের সমাজে বিদ্যালয়ও যৌন হেনস্থার মতো ঘৃণ্য ঘটনার বাইরে নয়। এই সঙ্কট রোধে দরকার সম্মিলিত সচেতনতা, আইনগত কাঠামো এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার।
প্রথমেই, প্রতিটি বিদ্যালয়ে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে ‘বিশাখা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে মহিলা শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী ও বাইরের এক জন বিশেষজ্ঞ সদস্য থাকা প্রয়োজন। যাঁরা যৌন হয়রানির অভিযোগ নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করবেন। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকা উচিত। যাতে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের আচরণগত পরিবর্তন বা সঙ্কেত বুঝতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয়ত, সিসিটিভি ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিদ্যালয়ের করিডর, সিঁড়ি, শৌচাগার সংলগ্ন এলাকা, ক্লাসঘরের বাইরে এবং প্রধান প্রবেশপথে উন্নত মানের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা উচিত। এর ফলে ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা সম্ভব এবং অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে গোপনীয়তা বজায় রেখে সিসিটিভি-র ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তৃতীয়ত, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ‘ভাল স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ’, আত্মরক্ষা, এবং যৌন সচেতনতা বিষয়ক ক্লাস অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। অভিযোগ বাক্স, ‘কনফিডেন্সিয়াল কাউন্সেলিং’ ও হেল্পলাইন নম্বরও সহজলভ্য করে তুলতে হবে।
অভিভাবকদের দায়িত্ব হল, সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ, তাদের মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা এবং ‘না’ বলতে শেখানো। কোনও অভিযোগ উঠলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজ ও স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব আছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। ক্লাব, এনজিও, স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা যৌন হেনস্থা বিরোধী প্রচার ও সম্মেলন করতে পারে।
ভুলে গেলে চলবে না, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু আইনগত নয়, আমাদের নৈতিক দায়িত্বও। বিশাখা কমিটি, সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি, সচেতনতা এবং মানবিকতা— এই চারটি স্তম্ভেই গড়ে উঠুক একটি সুরক্ষিত, মর্যাদাপূর্ণ ও শিক্ষার উপযোগী বিদ্যালয়।