• আইআইএম জোকায় ‘ধর্ষিতা মনোবিদের বয়ান’ নিয়ে রহস্য বাড়িয়ে তুললেন তাঁর বাবাই! ধৃত ছাত্র ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে
    আনন্দবাজার | ১২ জুলাই ২০২৫
  • বেহুঁশ করে আইআইএম ক্যালকাটা (যা আইআইএম জোকা নামে সমধিক পরিচিত)-র বয়েজ় হস্টেলে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন কেন্দ্রীয় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্র। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া লিখিত বয়ানে এমনই অভিযোগ করেছিলেন ‘নির্যাতিতা’ তরুণী। যদিও সেই বয়ান নিয়ে রহস্য বাড়িয়ে তুললেন ওই তরুণীর বাবাই। তাঁর দাবি, মেয়ের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি। কেউ খারাপ ব্যবহারও করেননি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে ঘুমোচ্ছেন। মেয়ে ঘুম থেকে উঠলে তিনি এই বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।

    ‘নির্যাতিতা’র লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবারই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জানা গিয়েছিল, শনিবার তাঁকে আদালতে আদালতে হাজির করানো হবে। সংবাদমাধ্যমের সামনে ‘নির্যাতিতা’র বাবা যা জানিয়েছেন, আদালতে এসেও তিনি সেই কথাগুলি বলেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়। তবে তিনি বা তাঁর তরফে কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত যুবককে আগামী শনিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি। অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতে ‘সবটাই আষাঢ়ে গল্প’ বলে দাবি করেন।

    পুলিশের কাছে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে ‘নির্যাতিতা’ জানিয়েছিলেন, শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি অভিযুক্তের কাউন্সেলিং করাতে আইআইএম জোকায় গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত তাঁকে বয়েজ় হস্টেলের ভিতর নিয়ে যান। বয়ান অনুসারে, সেখানে ওই তরুণীকে পিৎজ়া এবং জল খেতে দেওয়া হয়। খাবারে কিছু মেশানো ছিল বলে অভিযোগ। ‘নির্যাতিতা’ জানান, ওই খাবার খাওয়ার পরেই তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। এই সময় তাঁর বমি পেলে তাঁকে শৌচাগারেও যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে নাকি অভিযুক্তের ব্যাখ্যা ছিল, বয়েজ় হস্টেলে এক জন মেয়ে এসেছে, এটা তাঁর বন্ধুরা জেনে যেতে পারেন।

    ‘নির্যাতিতা’র লিখিত বয়ান অনুযায়ী, দু’জনের কথাবার্তা চলার সময়ে হঠাৎই অভিযুক্ত তাঁর চুল টেনে ধরেন। আত্মরক্ষায় চড় মারেন তরুণী। তার পরেই অভিযুক্ত তাঁর মাথা ঠুকে দেন। সংজ্ঞা হারান ‘নির্যাতিতা’। লিখিত বয়ানে ‘নির্যাতিতা’ জানিয়েছেন, অর্ধচেতন অবস্থায় তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। অনেক পরে জ্ঞান ফিরলে তরুণী দেখেন যে, তিনি বয়েজ় হস্টেলে রয়েছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। তরুণীর অভিযোগ, ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই অভিযুক্ত হস্টেলে ঢোকার আগে রেজিস্টার খাতায় তাঁকে নাম নথিভুক্ত করতে দেননি।

    ‘নির্যাতিতা’র বাবার দাবি অবশ্য ভিন্ন। তাঁর কথায়, “রাত ৯টা ৩৪ মিনিটে মেয়ে ফোন করেছিল। বলল ও গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরে ও সংজ্ঞা হারায়। জায়গাটা কোথায় ও বুঝতে পারেনি।” লিখিত বয়ান প্রসঙ্গে তরুণীর বাবার বক্তব্য, ওটি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা লিখিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। অভিযুক্তের সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

    শনিবার আলিপুর আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, তরুণীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে আলাপ হয়েছিল তরুণের। পেশায় মনোবিদ তরুণী কাউন্সেলিংয়ের জন্য আইআইএম জোকার লেক ভিউ হস্টেলে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। অভিযুক্তের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার আর্জি জানান।

    সরকারি আইনজীবী জানান, অভিযুক্তের ফোন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তদন্তকারী আধিকারিক আদালতে বলেন, “মেয়েটি বার বার বলেছেন যে তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। অভিযুক্তের ফোন থেকে কিছু ছড়ানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

    ঘটনা প্রসঙ্গে আইআইএম জোকার অধিকর্তা শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত। এই ঘটনাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থাকেও সর্বতোভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।’’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় তাঁরা বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনও ঘটনাকে রেয়াৎ করা হবে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)