গুজরাতি পরিবারকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ে গ্রেফতার দুই
আনন্দবাজার | ১১ জুলাই ২০২৫
কানাডায় পাঠানোর নাম করে কলকাতায় নিয়ে এসে একটি গুজরাতি পরিবারের পাঁচ সদস্যকে আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ সমীর দাস এবং যোগেশ্বর কামাত নামে ওই দুই অভিযুক্তকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে। সমীরকে ধরা হয় উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থানা এলাকার শ্যামনগর থেকে। অভিযোগ, তার বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল ওই পরিবারকে এবং সেখানেই মুক্তিপণের টাকার হাতবদল হয়েছিল। আর এই ঘটনায় অভিযুক্তদের হয়ে হোটেল ঠিক করে দেওয়া এবং গাড়ির বন্দোবস্ত করার অভিযোগে যোগেশ্বরকে সল্টলেক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি সংস্থার নামও উঠে এসেছে, যাদের দায়িত্ব ছিল, ওই পরিবারটিকে কানাডায় পাঠানোর। সেই সংস্থার মালিক-সহ বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত ফেরার। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত দু’জনকে বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১২ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সমীরের শ্যামনগরের বাড়িতেই মুক্তিপণের ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছিল হাওয়ালার মাধ্যমে। পুলিশ আরও জেনেছে, তার বাড়িতে মাঝেমধ্যেই ভিন্ রাজ্যের লোকজনকে নিয়ে এসে রাখা হত। প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কাদের এবং কেন সেখানে এনে রাখা হত, তা জানার জন্য সমীরকে জেরা করতে চাইছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সমীর এবং যোগেশ্বরকে জেরা করে অভিযুক্ত সংস্থাটির মালিকদের সম্পর্কে বিশদে জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, ওই সংস্থা কত জনকে কলকাতা হয়ে বেআইনি ভাবে বিদেশে পাঠিয়েছে, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।’’
লালবাজার জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার গুজরাতের বাসিন্দা এক ব্যক্তি রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ করেন যে, তাঁদের এলাকার বাসিন্দা একটি পরিবারের পাঁচ জনকে অপহরণ করে আটকে রেখেছে একটি সংস্থা। যাদের দায়িত্ব ছিল ওই পরিবারের সদস্যদের কানাডায় পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তারা তো তা করেইনি, উল্টে ওই পাঁচ জনকে কলকাতায় আটকে রেখে মুক্তিপণ বাবদ টাকা দাবি করছে। তদন্তে নেমে পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই দিনই বিমানবন্দর এলাকা থেকে আটক পাঁচ জনকে উদ্ধার করে। যার মধ্যে দু’টি শিশুও রয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযোগকারী ব্যক্তি আদতে এক জন ট্র্যাভেল এজেন্ট। তাঁর মাধ্যমেই অপহৃত পরিবারটির সঙ্গে অভিযুক্ত সংস্থার পরিচয় ঘটে। যাদের দায়িত্ব ছিল ওই পরিবারের সদস্যদের ঘুরপথে কানাডায় পৌঁছে দেওয়া। সেই মতো গত ২৩ মে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে যাওয়া হয় তাইল্যান্ডে। পুলিশের দাবি, তাইল্যান্ড থেকে খুব সহজেই কানাডার ভিসা পাওয়া যায় বলে ওই পরিবারটিকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা জোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় গত ২৩ জুন ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযুক্ত সংস্থাটি ফের কলকাতায় নিয়ে আসে। প্রথমে তাঁদের কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের কাছে এক জায়গায় রাখা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার একটি হোটেলে। এক তদন্তকারী জানান, কলকাতা থেকে কানাডায় পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় ওই সংস্থা। এ দিকে, গোটা পরিবারের থাকা-খাওয়া বাবদ প্রচুর খরচ হয়ে যায় তাদের। এর মধ্যেই গুজরাতের ওই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, এর পরেই ওই সংস্থাটি কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করে গুজরাতের ওই পরিবারের কাছ থেকে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশাল পটেল রজনীকান্ত নামে গুজরাতের ওই ট্র্যাভেল এজেন্ট কলকাতায় এসে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সূত্রেই পুলিশ ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুক্তিপণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থাকে। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গেলেই ওই টাকা কাদের মাধ্যমে তাদের কাছে এসেছিল, তা জানা যাবে। পুলিশের দাবি, বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং কাজ দেওয়ার নাম করে ওই সংস্থা বেআইনি ভাবে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কারবার করে থাকে। তারা কত জনকে এ ভাবে বিদেশে পাঠিয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।