মহিলা তৃণমূলের নেত্রীর যৌন হেনস্থার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়ে ওই নেত্রীকে যে হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ, তৃণমূলের চাপড়া ১ অঞ্চল কমিটিক সাধারণ সম্পাদক সেই সুরজিৎ ঘোষ ওরফে টফি অধরাই। বুধবার রাত পর্যন্ত তার নাগাল পাওয়া যায়নি বলে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের দাবি।
চাপড়ার ওই নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া, যৌন হেনস্থা ও তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতেই ভিলেজ পুলিশ, টফির বিশেষ ‘স্নেহভাজন’ অমিত পালকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই রাতেই অমিতের সঙ্গী ভোলা শেখ এবং টফির দুই শাগরেদ ভঞ্জন দাস ও জয় পালকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করা হলে তাদের আট দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাপের বাড়ি থেকে ফেরার সময় রাস্তায় অমিত ও তার সঙ্গী ভোলা মত্ত অবস্থায় ওই নেত্রীর পথ আটকে কুপ্রস্তাব দেয়। তাঁর অভিযোগ, যৌন হেনস্থাও করা হয়। তিনি দৌড়ে বাড়ি ঢুকে গেলেও দু’জন ফটক ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে। তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর আসরে নামে টফি। সে লোকজন নিয়ে মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। রাতেই ওই নেত্রী চাপড়া থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। পুলিশের দাবি, ওই রাতেই টফির খোঁজে তার বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার আগেই সে ঘর তালাবন্ধ করে বেপাত্তা হয়ে যায়।
কে এই টফি?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টফি আগে সিপিএম করত। ২০০৬ নাগাদ ধর্ষণের অভিযোগে জেলের ভাত খেতে হয়েছিল তাকে। তা সত্ত্বেও ২০১৩ সালে সিপিএম তাকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করে। পরে চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের হাত ধরে সে তৃণমূলে যোগ দেয়। তার প্রতিপত্তি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত টফির তোলাবাজির চোটে চাপড়া গোয়াড়িবাজার এলাকার ব্যাবসায়ীরা অতিষ্ঠ বলে তৃণমূলেরই একটা অংশের দাবি। পুলিশের খাতায় তার বিরুদ্ধে তোলা আদায় থেকে শুরু করে হুমকি, মারধর, অন্যের জমি দখল করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ আছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে টফি মূলত জমির কারবারে যুক্ত। ধৃতদের মধ্যে দু’জন তারই সঙ্গে জমির ব্যবসা করে। চাপড়ার বাসিন্দা প্রবীর ঘোষের অভিযোগ, “আমার প্রায় ৩৫ বিঘা জমি জোর করে দখল করে ওরা বিক্রি করে দিয়েছে। এমন আরও অনেকে আছে। তারা ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারে না।” না পারারই কথা। কারণ ভোট এলেই টফির কদর আরও বেড়ে যায়। অনেকেরই দাবি, বিগত ভোটগুলিতে টফি-বাহিনীকে সক্রিয় ভাবে কাজে লাগিয়েছে তৃণমূল। ভোটারদের হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে বুথে-বুথে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে তার জুরি মেলা ভার। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে এক বিজেপি নেতাকে মেরে দাঁত ভেঙে দেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এই পরিস্থিতিতে টফির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রত্যাশিত ভাবেই বিধায়ক ও তাঁর গোষ্ঠীর লোকজনের অস্বস্তির কারণ হয়েছে। বুধবার রুকবানুর অবশ্য দাবি করেন, “আমার সঙ্গে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সম্পর্ক ভাল। সকলেই আমার ঘনিষ্ঠ। তার বাইরে টফির সঙ্গে আমার কোনও দিনই তেমন যোগাযোগ ছিল না। আমি কোনও অপরাধকে প্রশ্রয় দিই না।”