পথ অবরোধ হল বহু জায়গায়, কোথাও কোথাও রেল লাইনের উপরে কলাপাতা ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিলেন ধর্মঘটের সমর্থকেরা। তবে মোটের উপর দুই জেলার সর্বত্রই ধর্মঘটে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত খোলা ছিল। হাজিরাও ছিল স্বাভাবিক।
শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে নামখানার হাসপাতাল মোড়ে সিপিএমের নামখানা এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে পথ অবরোধ করা হয়। এর জেরে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে বকখালি ও নামখানাগামী যান চলাচল।অবরোধে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছনোর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাধে। পরে অবরোধ তুলে নেন বাম সমর্থকেরা। সিপিএমের নামখানা এরিয়া কমিটির সম্পাদক সজল ঘোড়াই বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মঘট পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বাধা দেয়। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের দাবি জানাতে।’’
তবে মহকুমার অন্যত্র, যেমন কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও সাগর এলাকায় ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিক ছিল যান চলাচল ও ফেরি পরিষেবা। দোকানপাটও খোলা ছিল অধিকাংশ জায়গায়।
ভাঙড়, জীবনতলা, ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকায় কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে এ দিন ধর্মঘট সফল করতে বামপন্থী সংগঠনগুলি বেশ কিছু জায়গায় পথে নামে। ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। সিপিএমের পক্ষ থেকে ভাঙড়ের ভোজেরহাটে বাসন্তী হাইওয়ের উপরে মিছিল করা হয়। ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে মিছিল করে সিপিএম। রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটকপুকুর থেকে ২১৩ রুটের সমস্ত বাস চলাচল করেছে। ২১৩ বাস ইউনিয়নের সম্পাদক ইয়াদ আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আমাদের সব রুটের বাস এ দিন ঠিক মতো চলাচল করেছে। ৪৮টি বাস পথে নেমেছিল। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।’’
ভাঙড়, জীবনতলা এলাকায় সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল, কলেজে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। ভাঙড় ২ বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধর্মঘট উপলক্ষে ব্লক এলাকায় কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। ব্লক এলাকার সমস্ত সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল প্রায় একশো শতাংশ।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ধর্মঘট সফল করতে রাস্তায় নেমেছিলাম। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। কোথাও গন্ডগোল করতে বলপ্রয়োগ করিনি। শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করেছি।’’
বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে তেমন প্রভাব পড়েনি ডায়মন্ড হারবার মহকুমায়। তবে ট্রেন লাইনের তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ায় ভোর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ডায়মন্ড হারবার শাখার দেউলা ও সংগ্রামপুর স্টেশনের মাঝে ট্রেনের তারে কলাপাতা ফেলে দেন বন্ধ সমর্থকেরা। ফলে আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মুখে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রেল পুলিশ। ঘণ্টা তিনেক পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। সময় মতো বাস চলাচল করলেও অন্য দিনের তুলনায় বুধবার যাত্রীসংখ্যা ছিল বেশ কম। রায়দিঘিতে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। মন্দিরবাজার, কুলপি, মগরাহাট, মথুরাপুরের বিভিন্ন জায়গায় সকালের দিকে ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়লেও বেলা বাড়তেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।
জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত, পদ্মেরহাট এলাকায় সকালে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘট সমর্থকেরা। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
ধর্মঘটের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি ক্যানিং, বাসন্তী ও গোসাবায়। তবে এ দিন সকাল থেকে এই এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে বামেরা মিছিল করে। বাসন্তীর ভাঙনখালি বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন বামেরা। বাসন্তী রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। আধ ঘণ্টার মতো অবরোধ চলে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ক্যানিংয়ের হেড়োভাঙা বাজার সংলগ্ন রাস্তায় বেঞ্চ পেতে রাস্তা অবরোধ করেন এআইইউটিইউসি কর্মীরা। মিছিল হয়। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা অটো ও টোটো স্ট্যান্ডের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ক্যানিং মহকুমার সর্বত্র ট্রেন, বাস, অটো ও অন্যান্য গণপরিবহণ স্বাভাবিক ছিল।
বসিরহাটে বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ, মিছিল হয়েছে। সন্দেশখালির ত্রিমোহণী বাজার, বসিরহাটের বোটঘাট, স্বরূপনগর, মিনাখাঁর মালঞ্চ, হাসনাবাদের তালপুকুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ ও মিছিল হয়েছে। কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল।
বনগাঁ মহকুমায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস, বাজার সব খোলা ছিল। যানবাহন চলাচল করেছে। পেট্রাপোল বন্দরে স্বাভাবিক নিয়মে পণ্য আমদানি-রফতানির কাজ চলেছে। বাগদার হেলেঞ্চা এবং গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় প্রতীকী অবরোধ করেন ধর্মঘটের সমর্থকেরা।
সকালে অশোকনগর বিল্ডিং মোড়ে যশোর রোড এবং হাবড়া ১ রেলগেটের কাছে যশোর রোড অবরোধ করেন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকেরা। হাবড়া, অশোকনগরের একাধিক এলাকায় মিছিল বেরোয়, অবরোধ হয়েছে। হাবড়ায় একটি ব্যাঙ্কের গেট বন্ধ করে দেন ধর্মঘট সমর্থনকারীরা।
এ দিন পথ অবরোধ হয়েছে বেড়াচাঁপা চৌমাথায় টাকি রোড এবং হামাদামা বাজারে, বেড়াচাঁপা-হাড়োয়া রোডে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।