• ধর্মঘটে বিক্ষিপ্ত অশান্তি দুই জেলায়
    আনন্দবাজার | ১০ জুলাই ২০২৫
  • বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। চলল মিছিল, পিকেটিং, রাজ্য ও জাতীয় সড়ক অবরোধ। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হল। গ্রেফতার করা হয় বেশ কয়েকজন ধর্মঘট সমর্থনকারীকে। দুই জেলায় পরিবহণ ক্ষেত্রেও কিছুটা প্রভাব পড়ে। তবে সাধারণ জনজীবনে সেভাব প্রভাব ফেলতে পারেনি এই ধর্মঘট। দিনের শেষে অবশ্য ধর্মঘট সফল বলে দাবি করেছে বামেরা। তৃণমূলের দাবি, এ দিন ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি।

    এ দিন সকালে মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেট মোড়ে সরকারি বাস আটকানোর চেষ্টার অভিযোগে সিটুর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক গোপাল প্রামাণিক, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুকুমার আচার্য-সহ সাত বাম নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেদিনীপুরে দফায় দফায় সরকারি বাস আটকানোর চেষ্টা চলেছে। স্কুল, কলেজের সামনে পিকেটিং হয়েছে। এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক রণিত বেরা বলেন, ‘‘ফাঁকা স্কুল, কলেজে জোর করে ছাত্রছাত্রীদের ঢুকিয়ে ধর্মঘট ভাঙতে গিয়েছিল‌ তৃণমূল ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। তবে পারেনি। সারা মেদিনীপুর জুড়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে।’’

    এ দিন সকাল থেকে গড়বেতার তিনটি ব্লকে বৃষ্টির মধ্যেই বাম নেতা-কর্মীরা ছাতা মাথায়, বর্ষাতি পরে রাস্তায় নেমে পড়েন। গোয়ালতোড়ে বাস আটকানোর চেষ্টা করলে ধর্মঘটের সমর্থনকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। গড়বেতায় ব্যাঙ্ক, এলআইসি অফিস কয়েকটি অফিসে লাল পতাকা বেঁধে দেন বাম কর্মীরা। তবে এ দিন গড়বেতার তিনটি ব্লকেই দোকান, বাজার খুলেছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু ছিল। খড়্গপুর মহকুমার কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ধর্মঘটের প্রভাব পড়ে। ১৬ নম্বর কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কের লছমাপুরে অবরোধ করেন বাম শ্রমিক সংগঠন আইটাক সমর্থকরা। খড়্গপুর শহরও মোটের উপর ছিল স্বাভাবিক। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তিও হয়েছে। এ দিন প্রেমবাজারে পথ অবরোধ করে বাম গণ সংগঠন। খড়্গপুরের একটি বিমা অফিসে ধর্মঘটের জেরে এক মহিলা-সহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁতনের মনোহরপুরের কাছে বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ হয়। নারায়ণগড়ের খাকুড়দায় রাজ্য সড়কেও চলে অবরোধ। এ দিন বেলা সাড়ে ন'টা পর্যন্ত মেদিনীপুর-হাওড়া শাখায় ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

    ধর্মঘটের জেরে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কও অবরুদ্ধ হয়। বুধবার সকালে ঘাটাল শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান বাম কর্মীরা। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে দুরপাল্লার কিছু বাস ছাড়া অন্য কোনও বাস রাস্তায় নামেনি বললেই চলে। দাসপুরের চাঁইপাটে বাস বন্ধ করার অভিযোগে পাঁচ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চন্দ্রকোনা শহর এবং ক্ষীরপাই হালদার দিঘির মোড়েও অবরোধ হয়। আইটাকের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছিল এই ধর্মঘট। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারকে সাহায্য করতে উঠেপড়ে লেগেছে এই রাজ্যের তৃণমূল সরকার।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই ধর্মঘট সফল।’’ তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘ধর্মঘট কোথায়! রাস্তাঘাট, জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। মানুষ সাড়া দেয়নি।’’

    ঝাড়গ্রাম শহরের প্রধান রাস্তার উপর মিছিল করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। পতাকা হাতে সিপিএম, সিপিআই, এসইউসি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব, সমর্থকরা পথে নামেন। শিলদা, বেলপাহাড়ি, লালগড় এলাকায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। জেলা জুড়ে বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। সরকারি বাস চলাচল করলেও শিলদা ও ঝাড়গ্রামে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা বাধা দেন। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তবে গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম এলাকায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। ঝাড়গ্রাম শহরে দোকানপাট আংশিক বন্ধ ছিল। সিটুর জেলা সম্পাদক পার্থ যাদব বলেন, ‘‘ধর্মঘটে বেসরকারি পরিবহণ সামিল হয়েছে। লালগড়, বেলপাহাড়ি ও শিলদা এলাকায় ধর্মঘটে প্রভাব পড়ছে। পুলিশের সহায়তায় সরকারি বাস চলাচল করেছে।’’

    পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়ার অবশ্য দাবি, ‘‘বাংলায় ক্ষেত্রে এই ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। মিছিল হতে পারে কিন্তু বাংলায় কোনও প্রভাব নেই।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)