• তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মিশ্রিত জল ঢুকে বন্ধ্যা করে দিচ্ছে চাষের জমি, রুটি রুজি হারাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকরা...
    আজকাল | ০৯ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ। চরম অসুবিধার মধ্যে পড়ে  রুটি রুজি হারিয়ে কর্মহীন হতে বসেছেন মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের কয়েক হাজার কৃষক। কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ফরাক্কা এনটিপিসি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মিশ্রিত জল ঢুকে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার বিঘা জমি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেই জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ফসল।  

    গোটা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ফরাক্কা ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রামের প্রচুর কৃষক। ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'চাষিদের দুরবস্থার বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমার নজরে এসেছে। সোমবার  আমি গোটা বিষয়টি নিয়ে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছি। তাঁদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে চ্যানেল এবং স্লুইস গেট তৈরি করে  তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মিশ্রিত জল যথাযথভাবে অ্যাস পন্ডগুলিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য। এছাড়াও কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও তাঁদেরকে  গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে।' 

    ফরাক্কা এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের তরফে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যে চাষের জমি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তার প্রকৃত মালিক এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ নিজেই। বিবৃতিতে তারা আরও জানিয়েছে, কিছু গ্রামবাসী আলের পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছেন এবং 'টো ড্রেন 'থেকে জল নিয়ে কৃষি কাজে ব্যবহার করছেন। এই অবৈধ কাজের ফলে 'ড্রেনেজ' পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং যে উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছিল তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে প্রত্যেকদিন ওই কেন্দ্রে কয়েক মেট্রিক টন ছাই উৎপন্ন হয়। এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ পাইপলাইন এবং চ্যানেলের মাধ্যমে তা  বিভিন্ন অ্যাশ পণ্ডে জমা করে। অভিযোগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই চ্যানেল এবং পাইপগুলো বিভিন্ন জায়গায় ফেটে গিয়ে ফরাক্কা ব্লকের বাহাদুরপুর এবং বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের  আমতলা, গোহেলবাড়ি, খোশালপাড়া, ভৈরবডাঙ্গা, জোড়পুকুরিয়া-সহ আরও প্রচুর গ্রামের বিস্তীর্ণ চাষের জমি ছাই জলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। 

    কৃষকদের দাবি, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য প্রায় প্রতি বছরই তাঁদেরকে এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এবছর বর্ষার শুরুতে যেভাবে ছাই মিশ্রিত জল কৃষকদের জমিতে ঢুকে গিয়েছে তাতে মাঠে থাকা পাট যেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তেমনিই কৃষকদের পক্ষে নতুন করে আর ধান রোপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ওই ব্লকে চাষবাসের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল কয়েকশো পরিবার  আগামী দিন কীভাবে রুটি রুজি জোগাড় করবেন তা জানেন না। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের দাবি, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ মালঞ্চ অ্যাশ পণ্ডে বেশি করে ছাই পাঠাতে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটিয়েছে। 

    আনিকুল শেখ ইসলাম নামে আমতলা গ্রামের এক কৃষক বলেন,' প্রতিদিন আমাদের চাষের জমিতে ছাই মিশ্রিত বিষ জল প্রবেশ করছে। এর ফলে চাষের জমি ফসল উৎপাদনের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়াও বিষ মিশ্রিত জলে প্রচুর পোকামাকড় থাকায় চাষিরা ফসল কাটার জন্য মাঠে নামতে পারছেন না।' কৃষকদের দাবি, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় হাজার বিঘা চাষের জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। 

    তৃণমূল কংগ্রেসের বাহাদুরপুর অঞ্চল সভাপতি প্রেম কুমার ঘোষ বলেন, 'সমগ্র বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা ইতিমধ্যে প্রশাসনকে একটি 'মাস পিটিশন' জমা দিয়েছেন। এবারের বর্ষায় তাঁরা  নিজেদের জমিতে ধান লাগাতে পারছেন না।  প্রচুর জমিতে বীজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার জন্য জাফরগঞ্জ ,শাহবাজপুর, ঘাসুনিয়া ,অনুপপুর-সহ আরও বেশ কয়েকটি মৌজায় চাষাবাদ  ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত কৃষকদের সমস্যা সমাধান না করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।'
  • Link to this news (আজকাল)