• ট্রাউজ়ার্স গুটিয়ে পা ভিজিয়ে ক্লাস নেন শিক্ষকেরা, জল থইথই ঘরে পড়াশোনা! ফি বছর বর্ষায় একই ছবি
    আনন্দবাজার | ০৮ জুলাই ২০২৫
  • টানা বৃষ্টিতে জমা জল উঠোন ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে স্কুলে। ক্লাসঘরে পড়ুয়াদের হাঁটুসমান জল। তার মধ্যেই চলছে পড়াশোনা। জলে পা ডুবিয়ে চক, ডাস্টার নিয়ে ক্লাস নেন শিক্ষকেরা। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-১ ব্লকের কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়দের দাবি, গত ১০ বছর ধরে প্রত্যেক বর্ষায় এটা স্কুলের চেনা ছবি। কবে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে জানেন না কেউ-ই।

    কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৮ সালে। চারটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে স্কুলের পথচলা শুরু। কাটোয়ার গীধগ্রামের অন্যতম প্রাচীন এই বিদ্যালয়ে বয়সের ছাপ এখন ভবনের দেওয়ালে দেওয়ালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের পড়ুয়াসংখ্যা ৮১ জন। রয়েছেন তিন জন শিক্ষক। প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পাঠদানের জন্য স্কুলে এখনও শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা চারটি। ফি বছর বর্ষা নামলেই দুর্ভোগের ছবি দেখা যায় প্রতিটি কক্ষে।

    স্কুলের প্রধানশিক্ষক রামবরণ দাসের দাবি, “প্রায় এক দশক ধরে এমন জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। বর্ষা নামলেই আমাদের স্কুল একেবারে বানভাসি হয়ে যায়। ক্লাসঘর থেকে শুরু করে স্কুলপ্রাঙ্গণ, সবই জলে ভরে যায়। এই বছরও একই অবস্থা। বর্ষা নামতেই গোটা স্কুল জলে ভাসছে।’’ ‘জলযন্ত্রণা’র বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছেন? প্রধানশিক্ষকের জবাব, ‘বহুবার।’ তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন থেকে স্কুল দফতরকে জানানো হয়েছে। আশ্বাস মিলেছে। তবে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ মেলেনি।’’ সহ-শিক্ষক রতন মল্লিকের কথায়, ‘‘বর্ষা এলেই আমাদের স্কুল জলাভূমির রূপ নেয়। ক্লাসঘর থেকে স্কুলের বারান্দা, সর্বত্র জল থইথই করছে। পরনের ট্রাউজ়ার্স গুটিয়ে নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে।’’

    বছরের পর বছর ধরে বর্ষায় এমন দুর্ভোগ সইছেন কচিকাঁচারাও। স্বপন সাঁতরা-সহ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বর্ষা বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুরনো স্কুলভবন ভেঙে উঁচু করে নতুন ভবন তৈরি না-হলে এই দুর্ভোগ থেকে ছাড় নেই। এলাকার প্রাচীন স্কুলের দুরবস্থা নিয়ে কাটোয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির নারী, শিশু ও জনকল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তৃষা চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।’’ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য চাইলেন প্রমাণ। তিনি জানান, বর্ষায় স্কুলের ছবি-সহ সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে লিখে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। তিনি সেটা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে দেবেন। তাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদী মধুসূদন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)