কসবার আইন কলেজের মতো ‘মনোজিৎ মডেল’ যে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজেও সক্রিয় ছিল, সোমবার সে কথা কার্যত মেনে নিলেন ওই কলেজেরই অধ্যক্ষা।
বছর দেড়েক আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার নির্দেশে ইউনিয়ন রুমে নবাগত ছাত্রদের নগ্ন করে র্যাগিং করার যে অভিযোগ উঠেছিল, তা মেনে নিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি জানান, কয়েক জন ছাত্রের কাছ থেকে এই ধরনের ভিডিয়ো তিনি পেয়েছিলেন। তাঁদের লিখিত অভিযোগও পেয়েছিলেন। তার পরেই কলেজ পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কলেজের ছাত্র ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
পাশাপাশি তাঁর স্বীকারোক্তি, এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, কর্তৃপক্ষ বার বার নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ আটকানো যায়নি। কারণ, কলেজের নিরাপত্তাকর্মীদের ধমক দিয়ে ওঁরা ঢুকছেন। কলেজে এই বহিরাগতদের দাদাগিরি সম্পর্কে পুলিশকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে অভিযোগ।
নরসিংহ দত্ত কলেজের প্রাক্তনী তথা রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর দাপট বজায় ছিল ওই কলেজ চত্বরে। তাঁর নেতৃত্বেই কলেজের ইউনিয়ন রুমে নবাগত পড়ুয়াদের অশ্লীল ভাবে র্যাগিং করা হত। এই র্যাগিংয়ের অভিযোগ ঘটনার দেড় বছর পরে প্রকাশ্যে আনেন ওই সময়ের কয়েক জন পড়ুয়া। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি— সবাইকে জানালেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি।
এ দিন অধ্যক্ষা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘যে প্রাক্তনীর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছিল, কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলেজে আর না ঢুকতে। তার পর থেকে ওই প্রাক্তন ছাত্র আর কলেজে ঢোকেননি।’’ অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘বহিরাগতেরা এখনও কলেজে ঢুকছেন। এই অনুপ্রবেশ আটকাতে অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। কিছু ছাত্রের অনৈতিক আচরণ আমার কাজের ক্ষেত্রে বাধা হওয়ায় পুলিশের কাছে বার বার অভিযোগও করেছি। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ অধ্যক্ষার আরও অভিযোগ, এই বহিরাগতেরা ঘেরাওয়ের সময়ে এমন আচরণ করে, যা ঠিক ছাত্রসুলভ নয়। এমনকি, রাতে এসে জোর করে এবং কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকে ভয় দেখিয়ে, ধমকে ইউনিয়ন রুম খুলতে বাধ্য করনো হয় বলে অভিযোগও আসে।