বুধবারে ধর্মঘটের বিরোধিতা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য সরকার। আগামী বুধবার দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ১০টি শ্রমিক সংগঠন। তবে রাজ্য অর্থ দফতর সোমবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে, ওই দিন রাজ্য সরকারের এবং সরকার পোষিত সব দফতর খোলা থাকবে। ব্যতিক্রমী কারণ ছাড়া প্রত্যেক কর্মীকে ওই দিন অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে।
বুধবার রাজ্য সরকারের কোনও কর্মী ‘ক্যাজ়্যুয়াল লিভ’ নিতে পারবেন না। এমনকি অর্ধদিবস ছুটিও নেওয়া যাবে না ওই দিন। বুধবার কোনও কর্মী অফিসে হাজিরা না দিলে তাঁর এক দিনের বেতন কাটা যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কর্মজীবন থেকেও ওই দিনটি বাদ পড়বে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন, কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে, পরিবারে কারও মৃত্যু হলে, মঙ্গলবারের (৮ জুলাই) আগে থেকে কেউ গুরুতর অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকলে তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবারের আগে থেকে যাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, চিকিৎসা সংক্রান্ত ছুটি, ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ এবং ‘আর্নড লিভ’ নেওয়া রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই কড়াকড়ি থাকছে না।
কোনও কর্মী বুধবার অফিসে অনুপস্থিত থাকলে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হবে। কেন তিনি ওই দিন কাজে যোগ দিতে পারেননি, তা জানতে চাওয়া হবে। উত্তর সন্তোষজনক হলে তাঁর ছুটি মঞ্জুর করা যেতে পারে। অন্যথায় ওই দিনের বেতন কাটা যাবে এবং দিনটি কর্মজীবন থেকে বাদ পড়তে পারে। কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব না-দিলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করা হবে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই গোটা প্রক্রিয়াটি হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে অর্থ দফতর।
বস্তুত, এর আগেও রাজ্যে বিভিন্ন বন্ধ এবং ধর্মঘটের সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন থেকেই বন্ধ-ধর্মঘটের রাজনীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের পর থেকে আর কোনো বন্ধ ডাকেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও বন্ধ-ধর্মঘটের বিরুদ্ধে বার বার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি।
কেন্দ্রের নতুন শ্রম কোডের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দশটি শ্রমিক সংগঠন। পুরনো ২৯টি শ্রম আইন বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাতিল অথবা পরিমার্জন করে কেন্দ্র চারটি ভাগে বিভক্ত নতুন শ্রম কোড চালুর কথা আগেই জানিয়েছে। কিন্তু নতুন শ্রম কোডের ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। মূলত এর প্রতিবাদেই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে আগামী বুধবার। এর পাশাপাশি বেসরকারিকরণের বিরোধিতা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, চুক্তিভিত্তিক কাজের প্রথা বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ-সহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছে ওই শ্রমিক সংগঠনগুলি।
নবান্নের এই বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, “রাজ্য সরকার এর আগেও এই ধরনের হুলিয়া জারি করেছে। কিন্তু যে ভাবে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের অধিকার বার বার হরণ করছে, সেই অধিকার আদায়ের দাবিতে সরকারি কর্মীরা এই নির্দেশিকা উপেক্ষা করেই বন্ধে শামিল হবেন।”
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডলের দাবি, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী বা অধিগৃহীত সংস্থার কর্মচারীরা সরকারকে নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাই নবান্নের এই নির্দেশ কোর্টের নির্দেশকে শুধু অমান্য করছে না, এটা বেআইনিও।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁদের মেরুদন্ড সোজা, তাঁরা নবান্নের এই নির্দেশকে পরোয়া না করেই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা কোনও ফতোয়াকে মানি না। আমরা কেন্দ্র ও রাজ্যের স্বৈরাচারী নীতির প্রতিবাদ করে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করছি।’’
যদিও তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা ধর্মঘটের দিন সরকারি অফিস সচল রাখবে। ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রকাশ নায়েক বলেন, “যাঁরা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্কৃতির বিরোধী, তাঁরাই রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করবেন। আমরা এই নির্দেশিকাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছি। আগামী ৯ জুলাই যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তা ব্যর্থ করে রাজ্যের সব সরকারি কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলব। আমাদের সব সদস্য ওই দিন কাজে যোগ দিয়ে সব সরকারি অফিস সচল রাখবেন।”