• নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দাগি-অযোগ্য প্রার্থীরা, নির্দেশ হাইকোর্টের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ জুলাই ২০২৫
  • ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। সোমবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই চূড়ান্ত। সেই নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।’ যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বরের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা নির্দেশ দিয়েছে, তাই সেই দিকে নজর রেখে প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

    সোমবার নির্দিষ্টভাবে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা বয়সজনিত ছাড় পাবেন না। যদি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিতে পারেন, তাহলে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া অসফল চাকরিপ্রার্থীরাও অংশ নিতে পারবেন না।’

    আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘কমিশনের কাছ থেকে এই ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত নয়।’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য বলে চিহ্নিত না হওয়া ব্যক্তিদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিয়েছে। তার মানে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের গোটা প্রক্রিয়া থেকে বের করে দিয়েছে। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও এটা বলবেন?’ কল্যাণের সওয়াল, ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। কিছু প্রমাণ হয়েছে? কারও দোষ প্রমাণ হয়েছে? কোন আইনে এদের আটকানো হবে?’

    কলকাতা হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সওয়াল, ‘একবার এই ব্যক্তিদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, বেতন ফেরতের কথা বলা হয়েছে। এখন যদি আবার নিয়োগে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের একই অপরাধের জন্য দু’বার শাস্তি দেওয়া হবে।’ সবপক্ষের মতামত শুনে সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, শুধু দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। তবে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলবে। যার অর্থ, বিজ্ঞপ্তির বাকি অংশে আদালত হস্তক্ষেপ করেনি।

    এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, বিজ্ঞপ্তির বাকি কয়েকটি অংশ নিয়েও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন যোগ্য চাকরিহারারা। মামলাকারীরা জানিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ‘সিলেকশন’ (বাছাই) প্রক্রিয়া ওই সালের ‘রুল’ অনুযায়ী করতে হবে। ২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকেই তা করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। পাশাপাশি বয়সের ছাড়ের বিষয়টিও নির্দেশ মেনে করা হয়নি বলে দাবি করেন তাঁরা।

    প্রসঙ্গত, চলতি বছর এপ্রিলের শুরুতে ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত গোটা প্যানেলটি ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে এসএসসি। গত মাসের শেষেই ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের জন্য নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসএসসি। পরীক্ষার বিধিতেও নানা বদল আনা হয়।

    বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগের দিন গভীর রাতে নিয়োগের নয়া বিধি প্রকাশ করে এসএসসি। নয়া বিধিতে জোর দেওয়া হয় শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপরে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের। এটি আগে ছিল ৫৫। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে থাকবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। আগে এটি ছিল ৩৫। ইন্টারভিউয়ে আগের মতোই ১০ নম্বর থাকছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার উপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। এছাড়া ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর জন্যও সর্বোচ্চ ১০ নম্বর রাখা হচ্ছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)